জেলে নয়, বাড়িতে ‘সাজা খাটবে’ মাদক মামলার আসামি

খাগড়াছড়িতে মাদক মামলায় মো. ফারুক (৩৪) নামে এক আসামির এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে তাকে ১৩ শর্তে বাড়িতে ‘সাজা খাটার সুযোগ’ দেওয়া হয়েছে। এই রায় ঘোষণা করেছেন জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জিএম ফারহান ইসতিয়াক।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ১৩ দফায় মুচলেকা নিয়ে আসামিকে দুই জিম্মাদারের হাতে দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত ফারুক দিঘীনালা উপজেলার পশ্চিম বেতছড়ি এলাকার বাসিন্দা।

কোর্ট ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম জানান, ২০১৯ সালের ২৮ আগস্টে দিঘীনালা থানায় করা একটি মাদক মামলায় ফারুককে এক বছরের কারাদণ্ড দিলেও জেলে গিয়ে সাজা খাটতে হবে না। ১৩ শর্তে তাকে বাড়িতে সাজা খাটতে হবে।

শর্তগুলো হলো—সাজাকালীন আসামি আদালত নিযুক্ত প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে নিজেকে সমর্পণ করবে, তার বাসস্থান এবং জীবিকার উপায় সম্পর্কে প্রবেশন অফিসারকে অবহিত করবে, সৎ ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করবে এবং সদোপায়ে জীবিকা অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকবে, আদালত তলব করলে হাজির না হলে দণ্ড ভোগ করতে বাধ্য থাকবে, প্রবেশন অফিসার কর্তৃক প্রদেয় আইনানুগ মৌখিক বা লিখিত উপদেশসমূহ মেনে চলবে, আদালতের পূর্বানুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করবে না, দুশ্চরিত্র লোকের সঙ্গে মেলামেশা করবে না, কোনও প্রকার লাম্পট্য কাজে লিপ্ত হবে না, নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, ১০০টি  বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করবে, প্রত্যেক মাসে একজন এতিম বাচ্চাকে এক বেলা খাওয়াবে, দেশে প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য কোনও প্রকার অপরাধ কর্মে লিপ্ত হবে না, দেশে প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল থাকবে, স্বেচ্ছায় বা কারও প্ররোচনায় শান্তিভঙ্গের কোনও কাজে লিপ্ত হবে না, অথবা অংশগ্রহণ করবে না এবং উপরোল্লিখিত এক থেকে ১৩ নম্বর শর্তের কোনও শর্ত ভঙ্গ করলে আদালতের দেওয়া যে কোনও শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য থাকবে।

আসামির ‍দুই আত্মীয় আসাদুল হক ও মো. জুয়েল হোসেন মুচলেকায় সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৯ সালে ২৫০ ‍গ্রাম গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর চার্জ গঠন করার পর ১১ জন সাক্ষী নিয়ে আদালত এই রায় দিয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় আদালত আসামিকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে, যা প্রশংসনীয়।

খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা ও অ্যাডভোকেট আকতার উদ্দিন মামুন আদালত প্রদত্ত রায়কে দৃষ্টান্তমূলক উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে অনেকে সংশোধিত হবার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মলাভে অসুবিধায় পড়বে না।