‘সিনহা হত্যার রায়ে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে’

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ে আংশিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেছেন, ‘এই রায়ে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে।’
 
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকাল ৪টা ২২ মিনিটে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাত জন মামলা থেকে খালাস পেয়েছে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন,‌ ‌‘রায়ে আমরা আংশিক সন্তুষ্ট হয়েছি। তবে যাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ রায় পাওয়ার পর তাদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র প্রমাণ করতে পেরেছি। সে কারণে উচ্চ আদালত দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।’

রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলো—বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড

বেকসুর খালাস পাওয়া সাত জন হলো—এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ার শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল।

সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সেসময় প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপা দেবনাথ।

তবে কক্সবাজারের পুলিশ সেই সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। 

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্ত শেষে র‌্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।