মিরসরাই উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে তরমুজের। উপযুক্ত আবহাওয়া ও বালি মিশ্রিত মাটি হওয়ায় উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিনশ’ একর জমিতে চাষ হয়েছে তরমুজ। অধিকাংশ গাছে ফুল ফোটার পাশাপাশি তরমুজের মুকুল এসেছে। রবি মৌসুমে চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকলেও চলতি বছর এখানে তরমুজ চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা।
সরেজমিন পূর্ব ইছাখাল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজ লতার সমারোহ। তরমুজ গাছে কোনোটিতে ফুল আসছে, কোনোটিতে আবার তরমুজের মুকুল এসেছে। মিরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো পূর্ব ইছাখালী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়েছে তরমুজের।
জানা গেছে, প্রতি বছর রবি মৌসুমে উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জায়গা খালি পড়ে থাকতো। পূর্ব ইছাখালী গ্রামে দোঁআশ মাটি (বালিযুক্ত) ও উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় এবং ইছাখালী খাল থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় চলতি বছর পার্শ্ববর্তী নোয়াখালীর জেলার সুবর্ণচর উপজেলার ৯ জন উদ্যোক্তা মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমে তারা মাটিগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করেন।
তরমুজ চাষি মো. মুজাক্কির বলেন, তারা ৯ জনের একটি দল নোয়াখালীর মাইজদী কৃষি অফিস থেকে তরমুজ চাষের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বিগত কয়েক বছর নিজ উপজেলা সুবর্ণচরে তরমুজ চাষ করে সফল হন। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় তারা এখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের থেকে জমি বরগা নিয়ে চিন, আমেরিকা ও বাংলাদেশি ৮ প্রজাতির তরমুজ চাষ করেন। সাড়ে তিনশ’ একর জমিতে তাদের অধীনে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেও কোন সহায়তা না পাওয়ায় হত্যাশা ব্যক্ত করেন এই উদ্যোক্তা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মিরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আমি তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে এসেছি। জমিতে জৈব সার ব্যবহার ও রোগ প্রতিরোধের জন্য চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। আবহাওয়া উপযোগী থাকলে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও অন্যান্য রবিশষ্য থেকে এটাতে তিনগুণ বেশি লাভ হয়।
উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ইউনিয়নের বিস্তির্ণ এলাকা প্রতিবছর খালি পড়ে থাকতো। এ বছর সুবর্ণচর এলাকার কয়েকজন উদ্যোক্তা সেই জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। গাছের বৃদ্ধি ভালো হওয়ায় তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে তরমুজ চাষ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।