ভাষার মাসে ম্রো ভাষাভাষিদের হাতে উঠলো প্রথম ব্যাকরণ বই   

বান্দরবানে ম্রো ভাষায় প্রথম ব্যাকরণ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। ম্রো ভাষায় বিভিন্ন লেখা ও বইপত্র থাকলেও এবারই ম্রো সম্প্রদায়ের নিজেদের ভাষায় লেখা প্রথম ব্যাকরণ বই প্রকাশ হয়েছে। জেলা শহরের উজানি পাড়ায় লেখক ইয়াঙান ম্রোর বাস ভবনে বৃহস্পতিবার ব‌্যাকরণ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ম্রোদের ক্রামা ধর্মের প্রধান শিষ্য লেংয়াং ম্রো।

ব‌্যাকরণ বইয়ের লেখক ইয়াঙান ম্রো ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যভাষা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করার পর ম্রো সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে লেখালেখি করছেন।

মোড়ক উন্মোচনকালে বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় ইয়াঙান ম্রো বলেন, এ বইয়ের মাধ্যমে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন শুদ্ধভাবে তা‌দের ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারবে। বিশেষ করে ম্রো শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ বোঝার জন্য বইটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। প্রথম প্রকাশিত হিসেবে ব্যাকরণ বইয়ের ভুলত্রুটি ও অসম্পূর্ণ থাকতে প‌রে। তবে তা পরবর্তী‌ সংস্করণে সংশোধন করা হবে বলে জানান লেখক।

ব্যাকরণ বই লেখার প্রসঙ্গে ইয়াঙান ম্রো বলেন, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চশ শ্রেণিতে পড়ার সময় এক পরিদর্শকের ইংরেজি বাক্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। তখন ওই ইংরেজি বাক্য বুঝতে না পেরে কোনও উত্তর দিতে পারেননি। তখন থেকে ম্রো ভাষায় ব্যাকরণ বইয়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন তিনি। বই‌টি লিখ‌তে বিভিন্ন সময় ম্রো সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজন ও ম্রো ভাষার শিক্ষকদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাকরণ বইটি ম্রোদের নিজস্ব নিয়মে লেখা হয়েছে। এর আগে তার মোট ১৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ম্রো ভাষায় ৮টি বই ও ১০টি বই বাংলা ভাষায়।

বইয়ের আলোচনায় চিম্বুক পাহাড়ে বাগান পাড়ার বাসিন্দা ও ম্রো ভাষার শিক্ষক ঙানসিং ম্রো বলেন, ১৯৮৪ সালে ম্রো বর্ণমালা আবিষ্কারের পর তাদের হাতে লিখে লিখে বর্ণমালা পড়ানো হতো। এখন নিজেদের ভাষায় বই আকারে ছাপা হলো। এরফ‌লে এখন থেকে বইটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ম্রো ভাষা আরও শুদ্ধভাবে লিখতে ও পড়তে পারবে।

চিম্বুক পাহাড় থেকে আসা রুহফু পাড়ার বাসিন্দা রিংয়ং ম্রো বলেন, ম্রো ভাষার পাশাপাশি নিজেদের সামাজিক উন্নয়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সবকিছুর আগে মাতৃভাষা জানতে হবে। মাতৃভাষা রক্ষার মাধ্যমে ম্রোদের সামাজিক রীতি ও সংস্কৃতি রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।