জাহাজে চাকরির প্রথম যাত্রায় ইউক্রেনে গিয়ে বিপদে রাকিব

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি জাহাজের ক্রু হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার হোসেন মোহাম্মদ রাকিব। স্বপ্নের চাকরিতে ঢুকেই ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে ওঠেন এবং সমুদ্রপথে ইউরোপ যাত্রা শুরু করেন। তবে প্রথম যাত্রাতেই বাধে বিপত্তি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে হামলার শিকার হয়েছে বাংলাদেশের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। জাহাজে আটকা পড়েছেন রাকিবসহ ২৮ নাবিক-ক্রু। বোমা হামলার পর জাহাজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের বন্দর থেকে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন কি-না এই নিয়ে জেগেছে শঙ্কা। জাহাজে আটকে পড়াদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন স্বজনরা।

জাহাজে আটকা পড়া দুই জনের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। এরমধ্যে একজন হলেন ক্রু হোসেন মোহাম্মদ রাকিব। তার বাড়ি একই উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে। অন্যজন হলেন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী উমর ফারুক। তিনি সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। 

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকালে কথা হয় হোসেন মোহাম্মদ রাকিবের পিতা মো. আলী খোকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ১৯ জানুয়ারি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে ক্রু হিসেবে আমার ছেলের চাকরি হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে শ্রীলংকা হয়ে সিঙ্গাপুর বন্দরে নোঙর করা ওই জাহাজে ওঠে। এরপর নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছে। সর্বশেষ কথা হয় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। এখন তার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারছি না। ফেসবুক আর টিভির খবর ছাড়া আর কোনও খবর পাচ্ছি না।’

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওই জাহাজে বুধবার রাতে রকেট হামলা হয়েছে বলে শুনেছি। এতে একজন মারা গেছেন। আমার ছেলে রাকিবসহ বাকিরা কেমন আছে তা বুঝতে পারছি না। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে হেফাজতে ও নিরাপদে রাখেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব রাকিবসহ জাহাজের সবাইকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা তিনি যেন করেন।’

মো. আলী খোকন আরও বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাকিব সবার ছোট। তার চিন্তায় বুধবার থেকে পরিবারের কারও মুখে একটা দানাও পড়েনি।’

রাকিবের বড় ভাই আরাফাত হোসেন হৃদয় বলেন, ‘রাকিব কেমন আছে, ঠিকমতো বাড়ি ফিরতে পারবে তো, এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন) অনেক কর্মকর্তার সঙ্গেও আমরা এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

বোন মাহমুদা খানম বলেন, ‘আমার ভাই যাতে সুস্থভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসতে পারেন, এ বিষয়ে সরকার যাতে ব্যবস্থা নেয়, আমরা এই দাবি জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, বুধবার হামলার পর অলভিয়া বন্দরে থাকা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে আগুন ধরে যায়। শুরুতে নাবিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের চেষ্টায় জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে নিথর দেহ পড়ে ছিল হাদিসুর রহমান আরিফের।