স্কুল ড্রেস না পরায় ৩০ শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে না আসায় ৩০ শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সোমবার (২১ মার্চ) সকালে উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বেরনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে। এ সময় প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলের নির্দেশে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ড্রেস পরে যেসব শিক্ষার্থী আসেনি তাদের বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অভিভাবকরা অনুরোধ করলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিতে রাজি হননি প্রধান শিক্ষক। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হন।

তবে বিদ্যালয়ে বহিরাগতরা এসে শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত ও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার মেয়ে তিন দিন আগে স্কুল ড্রেস বানিয়ে দেওয়ার জন্য তার মাকে বলেছিল। কিন্তু তার মা বিষয়টি আমাকে জানায়নি। সকালে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দিলে বিষয়টি জানতে পারি। তাকে নিয়ে পুনরায় বিদ্যালয়ে যাই। আপাতত ক্লাস করার অনুমতি চাইলেও দেননি প্রধান শিক্ষক। উল্টো ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুল ড্রেস বানিয়ে দিতে না পারলে টিসি নিয়ে অন্য বিদ্যালয় মেয়েকে ভর্তি করেন। আমার মতো আরও কয়েকজন অভিভাবক অনুরোধ করলে সবাইকে একই কথা বলেছেন প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেরনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি স্থানীয় বাজারে অবস্থিত। আমি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসার জন্য নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এ বিষয়ে উদাসীন। স্কুল ড্রেস পরে আসা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া অনেক সময় সিভিল ড্রেসে থাকা যুবকরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করে। এসব অভিযোগ আমার কাছে আসে। আজও এই ধরনের অভিযোগ এসেছে। এতে আমি বিব্রত হই। অভিযোগকারীকে বলেছি, এরপর যদি বিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে এমন কিছু হয়ে থাকে পদক্ষেপ নেবো। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসতে বলেছি। এতে বহিরাগতরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কোনও শিক্ষার্থীকে হয়রানিও করতে পারবে না। এজন্য যারা স্কুল ড্রেস পরে আসেনি তাদের বের করে দিয়েছি।

১৫ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরোদমে পাঠদান চালু হয়েছে, স্কুল ড্রেস তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার প্রয়োজন ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ মার্চ থেকে নয়, আমি গত জানুয়ারি মাস থেকেই তাদের এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছি। বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ড্রেস পরে আসার নির্দেশনা দিয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আজ আমাকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলছি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

তিনি আরও বলেন, স্কুল ড্রেস না পরে এলে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার মতো কোনও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে ভুল করেছেন প্রধান শিক্ষক।