কুমিল্লার পথে পথে ভবন আতঙ্ক 

১৫ লাখ মানুষের নগরী কুমিল্লা। এ নগরীর বাসিন্দারা এখন ভুগছেন ভবন আতঙ্কে। নির্মাণাধীন ভবনের ওপর থেকে বিভিন্ন উপকরণ পড়ে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীতে প্রায় পাঁচশ’ ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এসব ভবনের মাত্র এক থেকে দেড়শটিতে রয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনি। এই বেষ্টনিও নামেমাত্র। বাকিগুলোতে তাও নেই। 

নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্মাণাধীন ভবনের সামনের সড়ক দখল করে মালিকরা রাখছেন ইট, পাথর, বালি ও রড। এতে পথচারীরাও চলাচল করতে পারছেন না স্বাচ্ছন্দে। নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় ভবনগুলোর ওপর থেকে বিভিন্ন সময় ইট, কাঠ, পাথর ও রড পড়ছে নিচে। এসব ভবনের নিচের রাস্তা দিয়ে চলার সময় অনেককেই দেখা গেলো মাথায় হাত দিয়ে রাস্তা পার হতে। অনেকে ভবনগুলোর সামনের পথই মাড়াচ্ছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি শক্তিশালী মহল সিটি করপোরেশনের কোনও নিয়ম তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। 

সম্প্রতি ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার মাথায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে কাঠ পড়ে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেন ভবন মালিক। ঘটনার পরদিন ভবনের এক পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি দিলেও অন্য পাশ ফাঁকা রেখেই নির্মাণকাজ চালিয়ে যান তিনি। 

নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা শেখ ফরিদ বলেন, শহরের বিভিন্ন জায়গায় আমাকে যেতে হয়। এখন ঘর থেকে বের হওয়াই যেন দায় হয়েছে। ভবনগুলো যেন মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছে। কখন যে মাথায় কী পড়ে! সিটি করপোরেশনের প্রতি অনুরোধ- একটা ব্যবস্থা নিয়ে মানুষগুলোকে বাঁচান।

কুমিল্লা নগরীতে ভবনের নির্মাণকাজ চলাকালে নিরাপত্তা বেষ্টনির বিষয়টি থাকছে উপেক্ষিতদক্ষিণ চর্থা এলাকার বাসিন্দা মার্জিয়া ইসলাম সারমিন। প্রতিদিনই নিজের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যান। তিনি বলেন, বের হলেই আমি ভয়ে থাকি। আমি যে রাস্তায় যাই, সে রাস্তার আশপাশে অন্তত ১০টা ভবনের কাজ চলছে। এগুলোর কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই। সারাদিন ইট, কাঠ ও রড পড়ে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকার নির্মাণাধীন ভবনের মালিকদের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারা জানান, ভবন নির্মাণে তারা এত ঝামেলা পোহাতে পারবেন না। তারা এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত নন। একাধিক ভবন মালিক বলছেন নিরাপত্তা বেষ্টনির বিষয়ে তারা জানেনই না। অনেকে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কল কেটে দেন।

ভবন নির্মাণকারীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লার সভাপতি আতিকুল্লাহ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করি নিয়ম মানতে। অনেক জায়গায় নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়া হয়নি, এটা সঠিক। এতে জীবনের ঝুঁকি বাড়ে। শ্রমিকদেরও ঝুঁকি থাকে। প্রশাসনকে অনুরোধ করবো যেন এসব প্রতিষ্ঠান ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া আমাদের কাছেও অভিযোগ দিলে আমরাও ব্যবস্থা নেবো।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. সফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা অভিযান চালাই। নিরাপত্তা বেষ্টনির জন্য অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নগরীর বাসিন্দারা যেন নিরাপদে চলতে পারেন, সে জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।