করোনা মহামারির কারণে গত দু’বছর বর্ষবরণের কোনও আয়োজন ছিল না। বাজেনি কোনও সুর। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার নববর্ষের প্রথম সূর্যটা উঠলো গানে গানে। বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন এলাকায় সুরে-গানে ও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন বছর ১৪২৯ বরণ করে নেওয়া হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে বর্ষবরণের আয়োজনের মাধ্যমে নির্মল করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। জরা ও জীর্ণকে পেছনে ফেলে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রামে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাতটায় সিআরবির শিরীষ তলায় শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালা। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ এর আয়োজন করে। এছাড়া নগরীর ডিসি হিলে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন এবং বাদশা মিয়া রোডের ক্যাম্পাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে।
খাগড়াছড়িতে বর্ষবরণে ছিল নানা আয়োজন। নতুন বছর ১৪২৯-কে বরণে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য র্যালির উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউনহল প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র্যালিতে সব বয়সের হাজার হাজার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বাঙালি নারী-পুরুষ ও শিশুরা ঐতিয্যবাহী পোশাক পরে ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নাচ-গান পরিবেশন করেন। পরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলারও উদ্বোধন করা হয়।
রাঙামাটিতে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ বর্ণিল সাজে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এবারের শোভাযাত্রায় পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শোভাযাত্রার অগ্রভাগে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পোশাকের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের পাহাড়ি জীবনধারাকে তুলে ধরা হয়। এছাড়া শোভাযাত্রা শেষে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পটুয়াখালীতে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পিডিএস চত্বর থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডিসি স্কয়ার চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন, সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিভিন্ন পাখ পাখালি ছবি, বর-কনে, ঘটক, পালকি, বাংলার ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপকরণ। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে ডিসি মঞ্চে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে বিভিন্ন সংগঠনের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। শেষে ডিসি স্কয়ার মাঠে বেলুন উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়েছে। বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের লোকনাথ ট্যাংকের পাড় ময়দান থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। পরে শহরের প্রধান- প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রাটি শহরের ফারুকী পার্কে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা অংশ গ্রহণকারী জানায়, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দীর্ঘ দুই বছর পর তারা উৎসবে শামিল হয়েছেন। এদিকে ফারুকী পার্কের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য লাঠিখেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সমবেত শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় এসো হে বৈশাখ সুরে-সুরে বর্ষবরণ সংঙ্গীত। এছাড়া পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে শহরের ফারুকী পার্কে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ, খাবার এবং মাটির তৈরি তৈজসপত্রের দোকান নিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, পাহাড়ে উৎসব মানে পাহাড়ি-বাঙালির মিলনমেলা। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে একাকার। সম্প্রীতির মঙ্গল শোভোযাত্রার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বর্ষ বরণে সম্প্রীতির মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। মন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন।