‘সব ধান ডুইবা গেলো, কেউ আইয়া খোঁজ নিলো না’

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলার মেদির হাওর, আকাশি হাওর ও ধইল্যা বিলের আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওরের কয়েক হাজার কৃষক। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অবশিষ্ট ধানের জমি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা।

এদিকে বছরের একমাত্র ফসল হারানোর মূহূর্তে কৃষি বিভাগকে পাশে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশেই আছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার ভাটি অঞ্চলে মেঘনা, ভলভদ্র ও লঙ্গর নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এতে গত দুই দিনে নাসিরনগর হাওর অঞ্চলের আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে মেদির হাওর, আকাশি হাওর, ধইল্যা বিল, তিতাজুরি বিল, আটাউরি বিল, খাসারচর বিলের ধান ডুবে গেছে। ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কেউ কেউ শেষ চেষ্টা হিসেবে পানির নিচ থেকে আধাপাকা ধান কেটে আনার চেষ্টা করছেন।

পানিতে ভাসছে হাওরের কৃষকদের স্বপ্ন

গত দুই দিনের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ৩শ’ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত আড়াই হাজার কৃষক।

নাসিরনগরের টেকানগর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম জানান, ‘আমার ৫০ কানি (৩০ শতাংশে এককানি) জমির ধান পানির নিচে। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’

মাছমা গ্রামের লাভলুমিয়া জানান, ‘পানির নিচ থেকে ডুবে ডুবে ধান কাটছি। ধান পচে যাচ্ছে। সরকারের কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ নেয়নি। কৃষি বিভাগের কেউ যদি আইয়া একটু খোঁজ নিতো, আমাদের কোনও দুঃখ থাকতো না। তারা আমাদের তালিকা করবো থাক দূরের কথা, কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।’

দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওরের কয়েক হাজার কৃষক

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক জানান, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। হাওর অঞ্চলে দুই হাজার ৫শ’ কৃষক রয়েছেন। তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে আপাদত ২৫ কেজি করে প্রণোদনার হিসেবে চাল দেওয়া হবে।’

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান শাওন জানান, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তাই দ্রুত হাওরের ধান কেটে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’