আখাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে অনিয়ম পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দেখে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজের পুরোপুরি তদারকিতে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার। ইউএনও যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন কাজ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আপত্তি তুললেও ইউএনও’র কথাতেই কাজ হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে জায়গা নির্ধারণ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম করা হচ্ছে। ৩০-৪০ হাজার টাকার জায়গা এক থেকে দেড় লাখ টাকা শতক করে কিনছেন। কেনা একটি টিলা কেটে কয়েক লাখ টাকার মাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক ঠিকাদারকে ইউএনও দায়িত্ব দিয়েছেন এসব দেখভাল করার। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূঁইয়াকে ১৬৯টি ঘরের কাজও দেন ইউএনও।

আরও অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজে যেন মুখ না খোলেন সেজন্য স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদদের ম্যানেজ করতে ইউএনও ৮০টি পাঞ্জাবি, বেশ কিছু শাড়ি কিনেছেন ঈদকে সামনে রেখে দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে এক জনপ্রতিনিধির স্ত্রীর জন্যই কিনেছেন ১৮ হাজার টাকা দামের শাড়ি। সবমিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার কেনাকাটা করেছেন তিনি। আলোচনা আছে, এসব ক্রয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছ থেকেই টাকা নেন ইউএনও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে এরই মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব আশরাফ আহমেদ রাসেলকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম ও গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদেরকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক নিজেই এসব ঘর পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি রাজমিস্ত্রী ও সহকারী নিয়ে যান। অনিয়ম দেখে কিছু কিছু ভবনের অংশ তিনি ভাঙতে বলেন। এ সময় নির্ধারিত রড না দেওয়াসহ নানা অনিয়ম বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসক এ সময় কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ড ও পিআইওকে ভর্ৎসনা করেন তিনি। উপজেলার কর্মমঠ, খলাপাড়াসহ ছয়টি প্রকল্পের মোট ৮০টির বেশি ঘর নির্মাণে অনিয়ম পেয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন ডিসি।

এদিকে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঠিকাদার নুরুজ্জামান ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তিনি ১৬৯টি ঘরের কাজের ঠিকাদার নন। তিনি কেবল সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। কাজের তদারকি করেছেন ইউএনও নিজে এবং তার কমিটির সদস্যরা।

এক ঠিকাদারকে দিয়ে ১৬৯টি ঘরের কাজ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ইউএনও রুমানা আক্তার দাবি করেন, ‘কিছু কাজে অনিয়ম হওয়ায় জেলা প্রশাসক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’ ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, ‘এসব কী বলেন’ উল্লেখ করে মোবাইলের লাইন কেটে দেন।

জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে কোনও ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে কোনও কর্মকর্তার অনিয়ম গাফিলতি পাওয়া গেলে প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।