৩১ বছর পরও ভয়ে আঁতকে ওঠেন মাবিয়া

১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে পরিবারের ১৪ জনকে হারান মাবিয়া খাতুন। তার বয়স সত্তরের বেশি। প্রায় দুই বছর ধরে অসুস্থ। তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়। কথাও বলতে পারেন না। তবে ৩১ বছর আগের সেই ভয়ঙ্কর ঝড়ের কথা মনে হলেই আঁতকে ওঠেন।

ঝড়ে বেঁচে যাওয়া মাবিয়া খাতুনের মেয়ে ছেনুয়ারা বেগম ও শাকেরা বেগম জানান, প্রলয়ংকারী সেই ঝড়ে পরিবারের ১৪ জন স্বজনকে হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে হারিয়েছেন ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশুসহ সম্পদ। কোনও উপায় না দেখে শহরের সমিতি পাড়া এলাকায় বসতি শুরু করেন তারা।

১৯৯১ সালের এই দিনে কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়। ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলের বসতি। মৃত্যু হয় প্রায় দেড় লাখ মানুষের। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারায় হাজার হাজার পরিবার। ঘূর্ণিঝড়ের ৩১ বছর অতিবাহিত হলেও আজও সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের।ঝড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারায় কয়েক হাজার পরিবার

ঘূর্ণিঝড়ে ছয় ছেলে-মেয়েকে হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব আমেনা খাতুন (৬০)। দুই মেয়েকে নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা মনে পড়লেই আতকে ওঠেন আমেনা খাতুন।

একই অবস্থায় দিন কোন রকম দিন পার করছেন মোতাহেরা বেগম। তারও তিন সন্তান ভেসে যায় সাগরের নোনা জলে। সেই ভয়াল স্মৃতি তাকে আজও তাড়া করে বেড়ায়। ঝড়বৃষ্টি দেখলে তারা আতকে ওঠেন।

ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত হানে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, টেকনাফ উখিয়া ও কক্সবাজার সদর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় গ্রামগুলো ঘুর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায়।উপকূলীয় বেল্টের বেড়িবাঁধ ভেঙে নেমে আসা পানি ও ধমকা হাওয়ায় সব কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। ভেসে যায় গৃহপালিত পশু, মৎস্য ও বনজ সম্পদ। এরপর কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামে নেমে আসে হাহাকার ও চরম দুর্ভিক্ষ। গত ৩১ বছরে এ অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি আজও উপেক্ষিত থেকে গেছে। গোটা উপকূলীয় অঞ্চল এখনও রয়েছে অরক্ষিত।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, জেলায় কোনও বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ বলা যাবে না। কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও পেকুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো মেরামত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করছি। বর্ষায় যে অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে সে অংশ গুলো মেরামতের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।