চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জে পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। প্রতিদিনই কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা করে দাম বাড়ছে। ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) মেয়াদ শেষ হওয়ায় বন্ধ রয়েছে পেঁয়াজের আমদানি। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছোট ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা। এছাড়া কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বিষয়টিকে ব্যবসায়ীদের কারসাজি হিসেবে দেখছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) খাতুনগঞ্জে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আড়তে পেঁয়াজ স্তূপ হয়ে রয়েছে। সে সঙ্গে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে ট্রাকে আসছে পেঁয়াজ। এরপরও দামে রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব।
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইপি’র মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। এ কারণে দেশে পেঁয়াজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। গত রবিবার (৮ মে) খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছৈ ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতিদিন দুই-তিন টাকা বেড়ে বৃহস্পতিবার ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। এখন মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আনার কথা চলছে। এ বিষয়ে ১৪ মে ব্যবসায়ীদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হতে পারে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসবে কিনা।
মধ্যম চাকতাই এলাকায় অবস্থিত এইচজে ট্রেডার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার হয়তো পেঁয়াজ চাষিদের কথা চিন্তা করে আমদানি বন্ধ রেখেছে। তবে এ উদ্যোগ আরও এক মাস আগে নেওয়া উচিত ছিল। কেননা এখন পেঁয়াজ জমি থেকে উঠে গেছে। কৃষকের পেঁয়াজ চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। তাই সরকারের সিদ্ধান্তে কৃষকরা নয়, ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
চাকতাই-খাতুনগঞ্জ কাঁচাবাজার আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) মেয়াদ ছিল চলতি মাসের ৫ মে পর্যন্ত। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয়দিন দেশের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। সরকার নতুন করে আমদানির অনুমোদন না দেওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসছে না। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
এদিকে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশি পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা ৪২ টাকায়।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। কেননা এখন যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, এগুলো আগের কেনা। এগুলোতে দাম বাড়ার কোনও যুক্তি থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, কতিপয় ব্যবসায়ীরা কখনও তেল, কখনও আলু, আবার কখনও পেঁয়াজ, রসুন কিংবা অন্যান্য পণ্য নিয়ে খেলছে। এখানে ক্রেতারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারও শক্ত হাতে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে এ ধরনের অভিযোগ আমরা শুনেছি। পেঁয়াজের বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে অভিযান চালানো হবে। দাম বেশি নেওয়া হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।