বিদ্যালয়ের ১৫৪ শতক জায়গা দখল করে দোকানপাট

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থান নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের ১৮৪ শতক জায়গা থাকলেও মাত্র ৩০ শতক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে আছে। বাকি ১৫৪ শতক দখল হয়ে গেছে। এসব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। ফলে বিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 

এদিকে, বিদ্যালয়ের দখলে ৩০ শতক জায়গা থাকলেও বিএস খতিয়ান আছে চার শতকের। বিদ্যালয়ের নাম আজিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় হলেও এর প্রবেশপথে এক স্থানে হাসান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি তোরণ রয়েছে। বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে আজিয়ারা বাজার সংলগ্ন স্থানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আলী আক্কাছ ভূঁইয়া, আবুল কালাম আজাদ, মীর কাশেম, নুরুল আমিন ও প্রয়াত সভাপতি আবুবকর ছিদ্দিক ভূঁইয়া জমি দান করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজিয়ারা ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রেখে আসছিল বিদ্যালয়টি।

কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের ১৮৪ শতক জায়গা থাকলেও মাত্র ৩০ শতক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে আছে

কিন্তু হঠাৎ করেই বাবার দানকৃত জায়গা দখলে নিতে থাকেন আলী আক্কাছ ভূঁইয়ার উত্তরসূরিরা। তারা দানকৃত জায়গা দখল করে সেখানে দোকানপাট তুলে ভাড়া দেন। কাগজপত্র করে নেন নিজেদের নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারের পাশের জায়গা হওয়ায় বিদ্যালয়ের ভূমির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে দানকৃত জায়গা দখল করেন দাতাদের উত্তরসূরিরা। দখলকৃত জায়গার মূল্য বর্তমানে সাত কোটি টাকা। 

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্যদের একজনের উত্তরসূরি স্থানীয় আফজল হোসেন। তিনি ওয়ার্ড সদস্য ও বিদ্যালয়ের সাবেক দাতা সদস্য। বিদ্যালয়ের কিছু জায়গা তিনি দখলে নিয়েছেন। এ বিষয়ে আফজল বলেন, আমরা নিজেদের মূল্যবান ১৪ শতক জায়গা বিদ্যালয়ের জন্য দান করেছি। ওই সময়ে আমি বিদেশ ছিলাম। তখন নিষেধ করেছিলাম। যাতে নিজেদের দরকারি জায়গা দান না করা হয়। তারপরও সবাই যখন দিচ্ছিল, আমরাও জায়গা দিই। পরবর্তী সময়ে আমি বিদ্যালয়ের কাছে ছয় শতক জায়গা দাবি করি।

দানকৃত জায়গা পুনরায় নিজের জন্য দাবি করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের যেসব জায়গা দখল হয়েছে, সেখানে দোকানপাট তোলা হয়েছে। দাতার পরিবারের লোকজনই এগুলো দখল করেছেন। এজন্য আমিও দখল করেছি।

এসব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল আহাম্মদ বলেন, অন্যান্য কাজ ও ব্যস্ততার কারণে বিদ্যালয়ের জায়গার বিএস খতিয়ান করতে পারিনি।

বিদ্যালয়ের কতটুকু জায়গার কাগজপত্র আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার শতক জায়গার বিএস খতিয়ান আছে। বাকিগুলোর কাগজপত্র করার জন্য শিগগিরই কাজ শুরু করবো।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুছ সালাম বলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।