একরাম হত্যা মামলা: ৪ বছরেও হয়নি আপিলের নিষ্পত্তি

বিচারিক আদালত চার বছর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার আলোচিত মামলায় ৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তবে হাইকোর্টে মামলাটির আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনও রায় কার্যকর সম্ভব হয়নি। ফেনী জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ এমন তথ্য জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের (২০ মে) তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক একরামকে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করে নিজ দলেরই কিছু নেতাকর্মী। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। তবে হাইকোর্টে আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি আটকে আছে। উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পরই রায় কার্যকর সম্ভব হবে।

মামলার বাদী নিহত একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম অভিযোগ করেন, ‘অনেক হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর হলেও উচ্চ আদালতে আমার ভাইয়ের মামলার ফাইল রহস্যজনক কারণে নিচে পড়ে যায়।’ রাষ্ট্রের কাছে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ,আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতার ১৬ জন আসামি আদালতে ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে আট আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক এবং ৯ আসামি ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামির সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। 

এদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জামিন গিয়ে পালিয়ে বেড়ানো আট আসামির মধ্যে রয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন।

এছাড়া মামলায় এখনও ৯ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেনি। এই ৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।

অন্যদিকে মামলার রায় ঘোষণাকালে খালাস পাওয়া ১৬ জনের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।

পলাতক আসামিদের বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘একরাম হত্যা মামলার ১৭ আসামিকে গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগসহ যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।’