অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবার চিতায় দুই কন্যার আগুন

অসুস্থ স্ত্রীকে রাতে কল করে ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে বললেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিপন চাকমা। স্ত্রী ওষুধ খেয়ে ঘুমালেও শনিবার (৪ জুন) রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুনের খবরে সেখানে চলে যান তিনি। আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারান। ঘুম থেকে উঠে স্বামীর মৃত্যুর খবর পান সুমনা চাকমা। এরপর থেকেই থামছে না আহাজারি। নিপন চাকমা ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড স্টেশনে লিডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাঙামাটির কলেজ গেট এলাকার মন্ত্রীপাড়ার বাসিন্দা।

সোমবার (৬ জুন) সকালে তার লাশ নিজ জেলায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিভাগীয় শ্রদ্ধা। এরপর বাড়িতে নেওয়া হয় লাশ। দুপুরে দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। রাঙাপানির আসামবস্তি শ্মশানে নিপন চাকমার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অশ্রুসিক্ত নয়নে বাবার চিতায় আগুন দেয় বড় মেয়ে প্রগতি চাকমা ও ছোট মেয়ে উন্নতি চাকমা। এ সময় পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

স্ত্রী সুমনা চাকমা বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলাম। শনিবার রাত ৯টার দিকে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি আমাকে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলেন। সকালে এক আত্মীয় ফোন করে জানান, সীতাকুণ্ডে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অনেক লোক মারা গেছে। তখন আমি অনেকবার স্বামীকে ফোন করি, কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। দুপুরের পর আমার দেবর চট্টগ্রামে গিয়ে সন্ধ্যায় লাশ শনাক্ত করে।’

তিনি জানান, দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে পড়ছে ঢাকার একটি কলেজে, ছোট মেয়েটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বাবার কথা বলেই অঝোরে কাঁদছে তারা।

ছোট মেয়ে উন্নতি বলে, ‘বাবা সবসময় লেখাপড়ার বিষয়ে উৎসাহ দিতেন। দুষ্টুমি কম করতে বলতেন। ছুটি নিয়ে যে কয়দিন রাঙামাটি থাকতেন, সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে পড়তে বসতেন। বাবাকে খুব মিস করছি। আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি।’

জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের আগুনে এই জেলার দুই ফায়ার কর্মী মারা গেছেন। অন্যজন হলেন মিঠু দেওয়ান। সকালে দুজনের লাশ জেলায় আনা হয়েছে। বিভাগীয় শ্রদ্ধা জানাতে শহরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসে নেওয়া হয় তাদের লাশ। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানান সহকর্মীরা। এতে অংশ নেন– রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন, রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার মো. বিল্লাল। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশের দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দুই সহকর্মীকে সকালে স্টেশন অফিসে বিভাগীয় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। মৃতের দুই পরিবারকে সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসক রাঙামাটির পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঝুঁকি জেনেই আমরা এই পেশায় এসেছি। ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। রাসায়নিক পদার্থ আছে, এটা না জানার কারণে এত প্রাণ ঝরে গেলো।’