হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কনটেইনার নিয়ে বিপাকে ডিপো মালিকরা

চট্টগ্রামের আরও চারটি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে ১১১টি কনটেইনারে রয়েছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। এসব হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রফতানির জন্য আনা হয়েছিল। সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এ রাসায়নিক নিয়ে বিভিন্ন মহলে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি কিছু কিছু শিপিং লাইন প্রতিষ্ঠান এসব হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পরিবহনেও অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন ডিপো মালিকরা।

এদিকে, মজুত বেড়ে যাওয়ায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের চালান সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষও এই রাসায়নিকের আমদানি-রফতানি কমাতে চায়।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের আমদানি-রফতানি সীমিত করার উদোগ নিয়েছে। তারা বিভিন্ন শিপিং অপারেটরকে চিঠি দিয়ে চালান পরিবহন সীমিত করার বিষয়টি জানিয়েছে। বিষয়টি আমরাও জেনেছি।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের চারটি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে বর্তমানে ১১১ কনটেইনার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মজুত আছে। এসব রাসায়নিক রফতানির জন্য ডিপোগুলোতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ওসিএল ডিপোতে ৪৯, পোর্টলিংক ডিপোতে ৩৩, ইস্টার্ন লজিস্টিক ডিপোতে ২২ ও কেএনটিতে সাত কনটেইনার হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে।’

বিকডা মহাসচিব বলেন, ‘কিছু কিছু শিপিং লাইন এসব পণ্য পরিবহনে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসব হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদি কোনও শিপিং এগুলো পরিবহন না করে সেক্ষেত্রে এগুলো পুনরায় ফেরত নিয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ। বেসরকারি ডিপোগুলো দুই দশকের বেশি সময় ধরে শতাভাগ রফতানি পণ্য এবং ১৫ শতাংশ আমদানি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে আসছে। শিপিং সেক্টরে এত বড় দুর্ঘটনা এটাই প্রথম।’

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার উপ-কমিশনার আলী রেজা হায়দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডসহ বেশ কিছু কেমিক্যাল ভর্তি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। এসব কনটেইনারের মধ্যে বেশ কিছু আছে নিলামযোগ্য। কিছু আছে ধ্বসংযোগ্য। হাইড্রোজের পার-অক্সাইডসহ কেমিক্যালের কনটেইনার দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কী পরিমাণ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে গার্মেন্ট শিল্পের ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ নানা খাতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহৃত হয়। দেশে বেশ কয়েকটি কারখানা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উৎপাদন এবং বিপণন করে থাকে। ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়াসহ নানা দেশে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রফতানি হয়ে থাকে। দেশেও এই কেমিক্যালের চাহিদা রয়েছে।

ইস্টার্ন লজিস্টিক ডিপোর নির্বাহী পরিচালক সরওয়ার মোরশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কনটেইনার ডিপো বা অফ ডকগুলো বন্দরের অংশ। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভর্তি বেশ কয়েকটি রফতানিযোগ্য কনটেইনার আমাদের ডিপোতে আছে। যেগুলো জাহাজে তোলার জন্য রাখা হয়েছিল। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর এসব হাইড্রোজের পার-অক্সাইড পরিবহনে অনাগ্রহ দেকাচ্ছে শিপিং লাইনগুলো। রফতানিকাকরদের বিষয়টি জানিয়েছি। রফতানিকারকরা দ্রুত এসব হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ডিপো থেকে সরিয়ে নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’