X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২
টেকনাফ-মংডু রুটেও বন্ধ রফতানি

বন্দরে নষ্ট হচ্ছে পণ্য, বড় লোকসানের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

আব্দুর রহমান, টেকনাফ
২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০০আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০০

সবশেষ গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্য থেকে ১৩৮ পিস কাঠ নিয়ে একটি বোট এসেছিল টেকনাফ বন্দরে। এরপর থেকে টেকনাফ-মংডু সীমান্তে আর কোনও পণ্য আমদানি-রফতানি হয়নি। তারও প্রায় তিন মাস আগে থেকে ইয়াংগুন-টেকনাফ রুটেও বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ফলে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় পুরোপুরিভাবেই বন্ধের পথে। এতে করে বন্দরে ব্যবসায়ীদের গুদামগুলোতে পড়ে আছে প্রায় ৫ কোটি টাকার রফতানিযোগ্য পণ্য। এর মধ্যে আলু ও সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হওয়া পথে। এ নিয়ে বড় লোকসানে পড়তে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ সংকট নিরসনে কোনও উদ্যোগ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে আমদানি-রফতানির তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, ‘ইয়াংগুনের পর আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইনের টেকনাফ-মংডু সীমান্ত দিয়েও আমদানি-রফতানি বন্ধ। মূলত ওপারে আভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কোনও মালামাল যাচ্ছে না। তবে আমাদের এখান থেকে মালামাল যেতে কোনও বাধা নেই।’

গেলো ১২ দিন ধরেই মংডু-টেকনাফ স্থলবন্দের আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় শূন্য কোঠায়। কেননা এর আগে থেকে আরাকান আর্মির কারণে গত তিন মাস ধরে ইয়াংগুন-টেকনাফ স্থলবন্দর সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারও।’

টেকনাফ বন্দর হয়ে কোনও পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে না

বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটি ঘাটে নোঙরে থাকা বোট থেকে আলু নামিয়ে আনছেন শ্রমিকরা। মূলত আলু ভর্তি বোট দুটি মংডু যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আরাকান আর্মির ‘সম্মতি’ না পাওয়ায় মালামালগুলো নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। বন্দরে এই মুহূর্তে ২ হাজার ৭০০ বস্তা আলু রয়েছে। এর মধ্যে ‘সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্স’-এর মালিক সাদ্দাম হোসেনের ২ হাজার ১০০ বস্তা এবং ‘এক্সপ্রেস এজেন্সির’ মালিক মো. ফারুকের ৬০০ বস্তা। গুদামে আরও পড়ে আছে ২২ হাজার বস্তা সিমেন্ট। এছাড়া পানি, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিক পণ্যও পড়ে আছে আশপাশের বিভিন্ন গুদামে।    

এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ‘এক্সপ্রেস এজেন্সি’র প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘টেকনাফ-মংডু সীমান্তেও বাণিজ্য বন্ধ, গত ১০-১২ দিন থেকে মালামাল আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। মূলত আরাকান আর্মির সম্মতি না পাওয়ায় এখান থেকে পণ্য যাচ্ছে না। পাশাপাশি সেখান থেকে কোনও পণ্য আসছে না।’

তিনি বলেন, ‘স্থলবন্দরে অবস্থা খুব খারাপের দিকে। কেননা এর আগে গত তিন মাস ধরে মিয়ানমার ইয়াংগুন-টেকনাফ সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় জান্তা সরকার। যার কারণে আমাদের রফতানির জন্য নিয়ে আসা ২ হাজার বস্তা আলুর পাশাপাশি ১০ হাজার বস্তা সিমেন্ট স্থলবন্দরে পড়ে আছে। পচনশীল হওয়ায় আলু নষ্ট হওয়ার পথে। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছে। তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, দ্রুত মিয়ানমারের উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সীমান্তে বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হোক।’

বোট থেকে নামানো হচ্ছে রফতানির পণ্য

বন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা জানান, রাখাইন রাজ্যে দখলের পর থেকে আরাকান আর্মির কারণে টেকনাফ-ইয়াংগুন থেকে সীমান্ত বাণিজ্যে রয়েছে গত তিন মাস ধরে। তখন থেকে অল্প পরিসরে হলেও বাণিজ্য চালু ছিল। এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্তে আমদানি-রফতানিও বন্ধ হয়ে গেছে। সবশেষ গত মার্চে রাখাইন রাজ্যে থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৬৭৫ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। এতে সরকার ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৫ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪ দশমিক ৫২ ডলারের ৩ হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯৮৪ মেট্রিক টন বিভিন্ন মালামাল রফতানি হয়েছে। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলু, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিক পণ্য।

অন্যদিকে গত ১৬ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যে থেকে আসার পথে নাফ নদ থেকে একটি কাঠের বোট হেফাজতে নেয় বিজিবি। এরপর থেকে মংডু-টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যে আমদানি-রফতানি হয়নি। তার আগে সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল রাখাইন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে একটি বোট এসেছিল।

এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মালিকবিহীন অবস্থায় বিজিবির জব্দকৃত কাঠগুলো আমাদের হেফজতে রয়েছে। এছাড়া এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। আপাতত আরাকান আর্মির সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কোনও পণ্যে আমদানি-রফতানি করতে পারছে না। ফলে গুদামে আলু, সিমেন্টসহ বিভিন্ন মালামাল রয়েছে।’

গুদামে রাখা আলুতে পচন ধরেছে

স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা মনির আহমেদ বলেন, ‘পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম। কারণ এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। যার ফলে শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছেন। এতে তাদের দুর্দিন যাচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের রফতানির উদ্দেশ্যে আনা আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে পচন ধরেছে। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরাও।’

টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, ‘স্থলবন্দরে পুরোপুরিভাবে সবধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ৫ কোটির বেশি বিভিন্ন পণ্যে নিজস্ব গুদামসহ স্থলবন্দরে পড়ে আছে। এর মধ্য পচনশীল আলু-সিমেন্ট নষ্ট হওয়া পথে। এতে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

তিনি বলেন, ‘রফতানি করতে না পেরে আমার অর্ধ কোটি টাকার মালামাল গুদামে পড়ে আছে। এর মধ্য আলুসহ অনেক মালামাল পচন ধরেছে। এছাড়া ওপারে (রাখাইনে) আমদানিরত কাঠ, ডাল ও শুঁটকিসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন পণ্য স্টকে রয়েছে। আশা করছি, সরকার দ্রুত সমাধানের জন্য এগিয়ে আসবে।’  

/ইউএস/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে
গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে পোশাক শিল্পে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি সম্ভব
বলছেন রোহিঙ্গা নেতারাকরিডরের চেয়ে রাখাইনে সেফজোন করলে কাটবে রোহিঙ্গা সংকট
সর্বশেষ খবর
সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা
সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা
১৭ ও ২৪ মে নিম্ন আদালত-ট্রাইব‍্যুনাল খোলা
১৭ ও ২৪ মে নিম্ন আদালত-ট্রাইব‍্যুনাল খোলা
‘১৮ বছরের ক্যারিয়ারে এভাবে মারধর খাইনি’
‘১৮ বছরের ক্যারিয়ারে এভাবে মারধর খাইনি’
শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে কূটনীতিকদের অবহিত করলেন বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী
শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে কূটনীতিকদের অবহিত করলেন বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী
সর্বাধিক পঠিত
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন