কুমিল্লা সিটি নির্বাচন

শেষ চার কেন্দ্রের ফলেই রিফাতের গলায় জয়ের মালা

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফলে বিজয়ী আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত ও বিজিত বিএনপির বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের কখনও সাক্কু এগিয়েছিল কখনও ছিল রিফাত।

কুমিল্লার শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়ে আসা ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে থাকে। এতে দেখা যায়— একবার এগিয়ে যান সাক্কু, পরে আরও কিছু কেন্দ্রের ফল যুক্ত হয়ে তাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান রিফাত। এভাবে ফলাফল ঘোষণার একপর্যায়ে ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর তা থমকে যায়। ওই সময় এগিয়ে ছিলেন সাক্কু।

চূড়ান্ত ফল ঘোষণার এক ঘণ্টার বেশি সময় আগে ১০১ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়। ওই সময়ে ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন সাক্কু। আর আরফানুল হক রিফাত পান ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

তাদের ভোটের ব্যবধান ছিল ৬২৯টি। এই ১০১ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বাকি চার কেন্দ্রসহ পুরো ১০৫ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন। নতুন এই চারটি কেন্দ্রের ফলাফলসহ মোট ১০৫টি কেন্দ্রের সবগুলো ফলাফলে মনিরুল হক সাক্কুকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান আরফানুল হক রিফাত। রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বেসরকারিভাবে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

এতে দেখা যায়, ১০৫টি কেন্দ্রের চূড়ান্ত ফলাফলে আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট পেয়েছেন। তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভোটে মাত্র ৩৪৩ ভোটে জয় পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন রিফাত।

নির্বাচন কমিশনের সমন্বিত ফলাফল এবং কুমিল্লা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের ফলাফল থেকে দেখা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে আসা শেষ চারটি কেন্দ্রের সবগুলোতেই রিফাত এগিয়ে যান। আর এই কেন্দ্রগুলোর ফলাফল যোগ হওয়ায় সাক্কুকে পিছনে ফেলে জয়ের মালা পরেন রিফাত। ওই চার কেন্দ্রে রিফাত পান দুই হাজার ৪৪৭ ভোট। অপর দিকে সাক্কু পান এক হাজার ৪৭৫ ভোট। এই চার কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান হয় ৯৭২টি। এ চার কেন্দ্রের ফলের ভিত্তিতেই ১০১০ কেন্দ্রের ফলাফলে পিছিয়ে থাকা রিফাত প্রতিদ্বন্দ্বী সাক্কুকে ছাড়িয়ে ৩৪৩ ভোটে এগিয়ে যান।

যে চার কেন্দ্রের ফলে রিফাতের গলায় জয়ের মালা

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪২, ৭৮, ৭৯ ও ৯৭ নম্বর কেন্দ্রের ফল পরে ঘোষণা করা হয়েছে। ৪২ নম্বর ভিক্টোরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে তিন হাজার ৮৭ ভোটারের মধ্যে পড়েছে এক হাজার ৪৪৫টি ভোট। এ কেন্দ্রে রিফাত পেয়েছেন ৮৫৩ ভোট। আর সাক্কু পেয়েছেন ৪০৮ ভোট। মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ১৫৭ ভোট।

দিশাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে ৭৮ ও ৭৯ নম্বর কেন্দ্র দুটি অবস্থিত। এ দুটি কেন্দ্রে রিফাত যথাক্রমে ৪১৩ ও ৫২৫ ভোট পেয়েছেন। আর সাক্কু পেয়েছেন যথাক্রমে ৩৭৪ ও ৩৬৭ ভোট। কায়সার পেয়েছেন ২৫৬ ও ২৩৬ ভোট।

এ ছাড়া ৯৭ নম্বর শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে রিফাত পেয়েছেন ৬৫৬ ভোট ও সাক্কু পেয়েছেন ৩২৬ ভোট। এ কেন্দ্রে কায়সার পেয়েছেন ৩০৮ ভোট। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরও একটি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। যেটির ফলাফল আগেই ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সেটিতেও রিফাত বেশি ভোট পান।

এদিকে ফলাফল ম্যানিপুলেট করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর। রিটার্নিং অফিসারের রেজাল্ট পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে মো. আলমগীর বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসার ডেটা দিয়েছেন, সেটা তিনি ঘোষণা করেছেন। এখানে রেজাল্ট ম্যানিপুলেট করার কোনও সুযোগ নেই। এ ফলাফল প্রার্থী, তাদের এজেন্ট ও অন্যদের কাছেও আছে। ইসির ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তো সরাসরি পরিচালনা করে না, পরিচালনা করেন রিটার্নিং অফিসার।