ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক, মারা গেলেন সাপে কাটা যুবক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সোয়াইদ মিয়া নামে এক যুবককে কামড় দিয়েছিল বিষধর সাপ। কিন্তু তাকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করান স্বজনরা। ১৬ ঘণ্টা পর হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

শনিবার (১৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর আগে গ্রামের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মৃত সোয়াইদ মিয়া (২২) উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের নতুন পাড়ার মো. বিল্লাল মিয়ার ছেলে।

চিকিৎসক ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোয়াইদ মিয়া সিলেটে ফার্নিচারের ব্যবসা করেন। ঈদ উদযাপন করতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাড়িতে আসেন। শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির পাশে খালের পানিতে মাছ শিকার করতে যান। রাত ১টার দিকে তার ডান পায়ে সাপে কামড় দেয়। বিষয়টি বন্ধুদের জানালে আক্রান্ত স্থানের দুই পাশে রশি দিয়ে বেঁধে দেন। পরে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের লোকজন ভোররাতে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। 

কিন্তু কুমিল্লা হাসপাতালে না নিয়ে সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাইফুল ইসলাম ও ডা. জীবন চন্দ্র দাস একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেন। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত ঘোষণা করেন।

ডা. জীবন চন্দ্র দাস বলেন, ‘সাপে কামড় দেওয়ার পরপরই নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে তাকে বাঁচানো যেতো। কারণ আমাদের কাছে সাপে কামড়ের ভ্যাকসিন ছিল। কিন্তু স্বজনরা সময়মতো হাসপাতালে না এনে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করিয়েছেন। যখন হাসপাতালে আনা হয়েছে তখন রোগীর পুরো শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য মৃত্যু হয়েছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে মনে হচ্ছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ কামড় দিয়েছে। সাধারণ কোনও সাপে কামড় দিলে মুখ দিয়ে রক্ত ও বিষ বের হয় না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ রায় বলেন, ‘বিষাক্ত সাপের কামড়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়েছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অথচ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কামড়ের ভ্যাকসিন আছে। তাকে মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছিল। ঘটনার পরপরই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে তাকে বাঁচানো যেতো।’