চট্টগ্রাম বিভাগে কারাবন্দিদের প্রায় অর্ধেক মাদক মামলার আসামি

মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও মাদকাসক্তি বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রতিনিয়ত গ্রেফতার হচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতরা। এতে কারাগারে বাড়ছে মাদক মামলায় বন্দির সংখ্যা। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে মোট ১৮ হাজার ২৬৭ জন বন্দি আছে। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মাদক মামলার আসামি। 

কারা সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের কারাগারগুলোতে মোট বন্দিদের মধ্যে সাত হাজার ৭০৭ জন মাদক মামলায় আসামি। তাদের মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ৪১৩ জন ও নারী ২৯৪ জন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছয় হাজার ৫৬ জন বন্দি আছে। তাদের মধ্যে মাদক মামলায় বন্দি দুই হাজার ৭১৯ জন। এর মধ্যে দুই হাজার ৩০ জন পুরুষ। 

কক্সবাজার কারাগারে চার হাজার ৩৭১ জন বন্দির মধ্যে মাদক মামলার আসামি এক হাজার ৪০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৩২৮ জন। খাগড়াছড়ি কারাগারে ১৭৫ জন বন্দির মধ্যে ৫৯ জন পুরুষই মাদক মামলার আসামি। রাঙ্গামাটি কারাগারে ২৭৮ জন বন্দির মধ্যে ৫৬ জন মাদক মামলার আসামি। এর মধ্যে পুরুষ ৫২ জন। 

বান্দরবানে ৩৬৯ জন বন্দির মধ্যে ১০৭ জন মাদক মামলার আসামি। এর মধ্যে পুরুষ ১০৪ জন। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই হাজার ৩৫৮ জন বন্দির মধ্যে এক হাজার ৮৬৭ জন মাদক মামলার আসামি। এর মধ্যে এক হাজার ৭৯৬ জন পুরুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে এক হাজার ৪২৭ বন্দির মধ্যে ৬৬৩ জন মাদক মামলার আসামি। এর মধ্যে পুরুষ ৬৩৩ জন। 

চাঁদপুর জেলা কারাগারে এক হাজার ৩ জন বন্দির আছে। তাদের মধ্যে ১৪৫ জন মাদক মামলায়। এর মধ্যে ১৪২ জনই পুরুষ। নোয়াখালী কারাগারে এক হাজার ১০৩ জন বন্দির মধ্যে ২৫৫ জন মাদক মামলার আসামি। তাদের মধ্যে ২৪৮ জন পুরুষ। ফেনী কারাগারে ৬৫৪ জন বন্দির মধ্যে ২৬১ জন মাদক মামলার আসামি। এর মধ্যে ২৪৯ জন পুরুষ। লক্ষ্মীপুর কারাগারে ৪৭৩ জন বন্দির মধ্যে ১২০ জন মাদক মামলার আসামি। এরম মধ্যে পুরুষ ১১৮ জন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার ধরন অনুযায়ী বন্দিদের পৃথকভাবে রাখার প্রয়োজন হলেও, চট্টগ্রামের সবগুলো কারাগারে জায়গা সংকটের কারণে তা হচ্ছে না। তবে সাজাপ্রাপ্ত, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন জঙ্গী বন্দিদের পৃথকভাবে রাখা হয়। মাদক মামলার বন্দিদের অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা হয়।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট বন্দির প্রায় অর্ধেক মাদক মামলার আসামি। আবার দেখা যায়, আটক বন্দি মাদকাসক্ত। সে অন্য মামলায় কারাগারে আছে। তাকে কিন্তু মাদক মামলার আসামি হিসেবে দেখানো হচ্ছে না। চট্টগ্রাম কারাগারে মাদক মামলার আসামিদের পৃথক করে রাখার সুযোগ নেই। কারণ, বেশিরভাগই মাদক মামলার আসামি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে এতগুলো মাদক মামলার আসামি থাকলেও, তাদের কাছে যাতে কোনোভাবেই মাদক পৌঁছতে না পারে, সে ব্যাপারে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। তবে নতুন যে কারাগারগুলো হচ্ছে সেগুলোতে পৃথক পৃথক মামলার বন্দিদের রাখার সুযোগ থাকছে।’

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারী এক নয়। মাদক সেবনকারীদের অন্য বন্দিদের সঙ্গে রাখা ঠিক হবে না। তাদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি কীভাবে সেবনের পথ থেকে ফেরানো যায় সেজন্য কাউন্সেলিং করতে হবে। মানুষ অপরাধ করবে তাকে নিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখবো তা নয়। কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে তৈরি করতে হবে। তাহলেই অপরাধ কমবে। কমে আসবে বন্দির সংখ্যা।’