৫ কনটেইনার মদ জব্দের ঘটনায় পাঁচ মামলা

চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পাঁচ কনটেইনার বিদেশি মদ জব্দের ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। সোমবার (১ আগস্ট) বন্দর থানায় কাস্টমসের পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বাদী হয়ে এসব মামলা করেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার (এআইআর) সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মদের তিনটি চালান জব্দের ঘটনায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নগরীর ডবলমুরিং থানার ৬৬৯ কেবি দোভাষ লেনের জাফর আহমেদ, তাদের কয়েকজন কর্মচারী এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে। বাকি দুটি চালানের ক্ষেত্রে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি। এখানে সিঅ্যান্ডএফ সংশ্লিষ্ট না থাকায় শুধুমাত্র আমদানিকারকদের আসামি করা হয়েছে।’

গত ২২ থেকে ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে-বাইরে পাঁচ কনটেইনার বিদেশি মদের চালান জব্দ করা হয়। যেগুলো সুতা, মেশিনারি এবং শিল্পের কাঁচামাল ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হয়েছিল। পাঁচটি চালানে ৭৭ হাজার লিটার মদ আনা হয়। এতে ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছিল।

পাঁচ কনটেইনার মদের চালানের মধ্যে সর্বশেষ ২৫ জুলাই দুই কনটেইনারে দুই হাজার ৮৫৮টি কার্টনে ৩১ হাজার ৪৯২ দশমিক পাঁচ লিটার মদ জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য তিন কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চালান দুটিতে ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে একটি কনটেইনারে ৫৩টি বস্তায় ৫৩ হাজার প্যাকেটে ১০ লাখ ৬০ হাজার শলাকা বিদেশি সিগারেট পাওয়া যায়। মোংলা ইপিজেডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসব মদ ও সিগারেট আমদানি করেছিল। মামলায় দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়।

এর আগের দিন ২৪ জুলাই এক কনটেইনারে এক হাজার ৪৩০টি কার্টনে ১৫ হাজার ২০৪ লিটার মদ পাওয়া যায়। যার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দুই কোটি তিন লাখ টাকা। এই চালানে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমদানিকারক ছিল ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছিলেন নগরীর ডবলমুরিং থানার ৬৬৯ কেবি দোভাষ লেনের জাফর আহমেদ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে।

২২ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হওয়া মদের দুটি চালান জব্দ করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। ওই দিন রাত ২টার দিকে চালান দুটি র‌্যাবের সহায়তা নিয়ে জব্দ করা হয়। চালান দুটিতে এক হাজার ৩৩০ কার্টনের ভেতর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক পাঁচ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া যায়। যার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পণ্য চালান দুটিতে মিথ্যা ঘোষণায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি চালানে ছিল ১৬ হাজার ১১৭ দশমিক পাঁচ লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ। ওই চালানের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং জড়িত রাজস্ব প্রায় আট কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের নামে টেক্সটার্ড ইয়ান ঘোষণায় এবং একই দিন ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে রোভিং মেশিন ও ববিন ঘোষণায় চালান দুটি আনা হয়। চালান দুটিতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছিলেন নগরীর ডবলমুরিং থানার ৬৬৯ কেবি দোভাষ লেনের জাফর আহমেদ। এ ঘটনায় করা মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্দরের ভেতরে-বাইরে পাঁচটি মদের চালান জব্দের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। কাস্টমসের পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলাগুলো করেছেন। মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে।’