মেম্বারের বিরুদ্ধে কর্মসৃজন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

কক্সবাজারের টেকনাফে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ‘৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে’ মেম্বারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছে কমিটি। 

ভুক্তভোগী শ্রমিকদের অভিযোগ, সম্প্রতি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আব্দুল মান্নান শ্রমিকদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে আসা কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তালিকা থেকে শ্রমিকদের নাম বাদ দিয়েছেন। পরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ শ্রমিক জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শ্রমিকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। গত বুধবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে তদন্তে যান জাহাঙ্গীর আলমসহ কমিটির সদস্যরা। এ সময় সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া মৎস্য অফিস কার্যালয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতির খবর পেয়ে ভুক্তভোগী শ্রমিকরা উপস্থিত হন। তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য দেন। সেইসঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার চান।

তদন্ত কর্মকর্তাকে দেওয়া বক্তব্যে খুরশিদা বেগম বলেন, ‘কর্মসৃজন প্রকল্পে যতদিন কাজ চলেছে ততদিন আমাকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। পরে আমার মোবাইলের অ্যাকাউন্টে সাত হাজার ৬০০ টাকা আসে। টাকা আসার খবর পেয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মান্নান আমাকে ডেকে নেন। তিনি সাত হাজার ৬০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা আমাকে দিয়ে বাকিটা নিয়ে যান। এভাবে আমার কাছ থেকে দুবার সমপরিমাণ টাকা নিয়েছেন। শেষবার টাকা দিতে না চাইলে তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেন মেম্বার আব্দুল মান্নান।’

একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কর্মসৃজন প্রকল্পে কাজ করে আমি প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছি। এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ টাকা নিয়ে যান মেম্বার আব্দুল মান্নান। দ্বিতীয়বার ছয় হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেখান থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে যান। পরের বার ১৬ হাজার ৫০০ টাকা আমার মোবাইলের অ্যাকাউন্টে আসে। সেখান থেকে ছয় হাজার আমাকে দিয়ে বাকি সাড়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যান। এসব কথা কাউকে জানালে আমাকে কাজ থেকে বাদ দেবেন বলে হুমকি দেন মেম্বার আব্দুল মান্নান।’

স্থানীয় বাসিন্দা সোনা আলী বলেন, ‘আমি কর্মসৃজন প্রকল্পে কাজ করে এক টাকাও পাইনি। আমার টাকা কে তুলেছে তাও জানি না। কর্মসৃজনের কাজের টাকা না পেয়ে ইউএনও এবং ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’ 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেম্বার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘শ্রমিকদের এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিইনি। তারা কেন আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছেন তা জানি না।’

তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ভুক্তভোগীদের অনেক অভিযোগ পেয়েছি। কোন কোন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা খুঁজে বের করবো। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো আমরা।’ 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী শ্রমিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’