ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধানের চারার হাট জমজমাট

শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান রোপণের মৌসুম। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে জমিতে এই ধানের চারা রোপণ করা হয়। এ কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুরের বৃহৎ চারার হাট জমে উঠেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা এসে এই হাটে চারা কেনাবেচা করছেন। 

বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, নন্দনপুরের হাটে চাহিদা অনুযায়ী চারা পেয়ে বেশ খুশি তারা। বিক্রেতারা বলছেন, বিক্রি ভালো হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নন্দনপুর জমে ওঠে ধানের মৌসুমী বায়ু চারার হাটটি। কৃষকরা নিজেদের তৈরি বীজতলা থেকে ধানের চারা আটি বেঁধে হাটে নিয়ে আসছেন। প্রতি আটি ৭০ থেকে প্রকারভেদে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক এলাকা থেকে চারা কিনতে আসা কৃষক আমির আলী জানান, তাদের এলাকায় বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি। তাই এই হাটে এসে চাহিদা অনুযায়ী ধানের চারা ক্রয় করছেন। 

নন্দনপুরের হাটে চাহিদা অনুযায়ী চারা পেয়ে বেশ খুশি কৃষকরা

তিনি বলেন, ‘দুই কানি ক্ষেতের জন্য চারা কিনতে এসেছি। আশা করি ভালো ফলন হবে। এই হাটের দাম এবার খুব কমও নয় আবার বেশিও নয়। আমাদের নাগালের মধ্যেই আছে। প্রতি আটি ৭০ থেকে প্রকারভেদে ১৪০ টাকা দরে চারা পাওয়া যাচ্ছে।’

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আসা কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা তুলে নন্দনপুর হাট নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। আমরাও মোটামুটি দামে কোনও ঝামেলা ছাড়াই চারা কিনে নিয়ে যেতে পারি। এই হাট থেকে কেনা চারায় ধানের ফলন ভালেঅ হয়। সেজন্যই এতদূর থেকে এখানে আসা।’

আবুল কালাম নামে এক চারা বিক্রেতা বলেন, ‘নন্দনপুর হাটে বিআর-২২ এবং ৪৯ এবং ৫০ ধানের চারার পাশাপাশি, খাসা, কালিজিরা ও বরজ খাসা ধানেরসহ বিভিন্ন ধানের চারা বিক্রি হচ্ছে বেশি। হবিগঞ্জের লাখাই, নাসিরনগর ও ফান্দাউকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এলাকায় বন্যাসহ নানা কারণে ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য তারা এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও ন্যায্যমেল্যে তাদের কাছে চারা বিক্রি করছি।’

বিক্রেতারা বলছেন, বিক্রি ভালো হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বীজতলা থেকে ধানের চারা আটি বেঁধে হাটে নিয়ে আসছেন কৃষকরা

সোলমান মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘চারার দাম এবার ভালো। প্রতি কানি (৩০ শতাংশ) ক্ষেতের জন্য ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চারার দাম পড়ে। নাসিরনগর থেকে সিলেট—আশপাশের সব অঞ্চলের কৃষক এই হাটে আসেন। এবারও ক্রেতা সমাগম ভালো। আমরাও চারার ভালো দাম পেয়ে খুশি।’

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আমন মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এক লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে দুই হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে চারার বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বীজতলা হয়েছে দুই হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অন্তত আট শতাংশ বেশি জমিতে বীজতলা করা হয়। নিজের জমির পাশাপাশি বাজারে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত কিছু বীজ বপন করেছেন কৃষকরা। এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৪৭০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যে ৬৯ শতাংশ জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।