সোনার বার দিয়ে কিশোরকে ফাঁসানোর মামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তার জামিন

চট্টগ্রামে বিচারকের দায়ের করা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন পতেঙ্গা থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা। সোনা চোরাচালানের অভিযোগে এক কিশোরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ঘটনায় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন চট্টগ্রামের এক বিচারক। 

ওই দুই কর্মকর্তা হলেন শিল্প পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ও পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তারা। শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল হাসান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘বিচারকের দায়ের করা মামলায় আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পাল। আদালত শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।’

সোনা চোরাচালানের অভিযোগে মিথ্যা মামলা, মিথ্যা প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা। পরে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। 

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল রাতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন বাটারফ্লাই পার্কের সামনে থেকে দুটি সোনার বারসহ এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরদিন ২২ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন মামলা করেন। মামলার তদন্ত করেন এসআই সুবীর পাল। তদন্ত শেষে কিশোরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে একই বছরের ৩ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

মামলার বিচারকালে দুই পুলিশ আদালতে স্ব স্ব এজাহার ও পুলিশ প্রতিবেদনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। গত বছরের ৪ অক্টোবর আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওই কিশোরকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, ‘কিশোরের মা সোনার বারের বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরও অহেতুক মামলা করে পুলিশ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।’

আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ‘ঘটনার দিন কিশোরের এক আত্মীয় শুল্ক বিধান না মেনে বাহরাইন থেকে দুটি সোনার বার নিয়ে আসেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বিমানবন্দরে তাকে আটক করেন লাগেজ পরিদর্শক। পরে শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি ওই কিশোরকে দেন তিনি।’

বিচারকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘জব্দ করা সোনার বারের কাগজপত্র উপস্থাপন করা সত্ত্বেও তা আমলে নেননি এসআই আনোয়ার হোসেন। ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে এজাহারকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে দায়িত্ব জ্ঞানহীন এবং মিথ্যা দোষীপত্র দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রকৃত সত্য জানা সত্ত্বেও মিথ্যা দোষীপত্রের সপক্ষে শপথ গ্রহণপূর্বক মিথ্যা সাক্ষ্যও দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। এক মাস ছয় দিন জেলহাজতে থাকার পর ওই বছরের ২৮ মে জামিন পায় কিশোর। নির্দোষ ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করায় এসআই আনোয়ার হোসেন এবং মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রতিবেদন দেওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা সুবীর পালের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ ও ২১১ ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেন আদালত। নির্দেশনার আলোকে মামলা করেন বিচারক।