২৮ বছর ধরে কাজে আসছে না ৪ কোটি টাকার টার্মিনাল

২৮ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে রাঙামাটির একমাত্র কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। টিকিট কাউন্টারগুলো ব্যবহার হয় না। যাত্রীদের বসার চেয়ারগুলো এখন নেই। অথচ যাত্রীসেবা ও যানজট নিরসনের কথা চিন্তা করে চার কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি এখন কোনও কাজে আসছে না। তবে বাস টার্মিনালে নিয়মিত রাখা হয় ট্রাক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্তজেলা ও দূরপাল্লার বাস রাখা, টিকিট সংগ্রহ ও যাত্রীসেবার লক্ষ্যে শহরের ফিশারি বাঁধ এলাকায় ১৯৯ সালে চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। দীর্ঘ ২৮ বছর ব্যবহার না হওয়ায় টার্মিনালের আশপাশের সড়কে তৈরি রয়েছে খানাখন্দ। টার্মিনাল নির্মাণের পর এটি ব্যবহার হয়েছে ছয় মাস। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে টার্মিনালের অনেক জায়গা। জায়গা দখল ও নানা অভিযোগে টার্মিনালটি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেন তৎকালীন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতারা। তখন থেকে টার্মিনালে বাস না রেখে সড়কের আশপাশে রাখা হয়। অধিকাংশ বাস রিজার্ভবাজারে রাখা হয়। সেখানে সব বাসের কাউন্টার।


স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস মালিক সমিতি টার্মিনাল ব্যবহার না করে শহরের সরু সড়কের যেখানে-সেখানে যাত্রী তুলছে। এতে শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, টার্মিনালটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। টার্মিনালজুড়ে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এজন্য সেদিকে শহরের মানুষজনের যাতায়াত কম।

পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে টার্মিনালে কিছু বাস রাখা হয়। রাতের বেলায় ওসব বাসের তেল, ইঞ্জিনসহ যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। এজন্য সেখানে বাস রাখা হয় না। আবার অবৈধ দখলদাররা টার্মিনালের অনেক জায়গা দখল করে নিয়েছে। দখলমুক্ত করে নিরাপত্তা দিয়ে টার্মিনালটি আবারও চালু করা হলে যাত্রী ও পরিবহনচালকসহ সবাই উপকৃত হবে।


রাঙামাটির বাসচালক মো. ইলিয়াস ও মাসুদ রানা জানান, টার্মিনালটি চালু হলে চালক ও যাত্রীদের সবচেয়ে সুবিধা হবে। কারণ সড়কে বাস রেখে যাত্রী তোলায় যানজট তৈরি হয়। মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। টার্মিনালে বাসগুলো রাখলে সময়মতো গন্তব্যে যেতে সহজ হবে। টার্মিনালটি বছরের পর বছর সচল না থাকায় মাদকসেবীরা রাতে আড্ডা জমায়। বাসের তেল ও ইঞ্জিনসহ যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা।

আরেক বাসচালক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‌‘বাস টার্মিনালে এখন ট্রাক রাখা হয়। দিন দিন দখলে চলে যাচ্ছে টার্মিনালের জায়গা। প্রশাসন দখলদারদের উচ্ছেদে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক, শহরে যানজট কমুক। টার্মিনালে বাসগুলো রাখা হয়, সেখান থেকে ছাড়া হোক, যাত্রীরা নিরাপদে গন্তব্যে যাক।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, ‘টার্মিনালে বাস রাখা হয়। তবে কম। কিন্তু যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে রিজার্ভবাজার থেকে বাসগুলো ছাড়া হয়। এজন্য অধিকাংশ বাস টার্মিনালে রাখা হয় না।’

এ ব্যাপারে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘টার্মিনাল সচল না থাকায় জনসাধারণের ভোগান্তি হয়। সেইসঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী তোলায় শহরে যানজট সৃষ্টি হয়। জেলা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির আগামী সভায় টার্মিনাল চালুর বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে টার্মিনালের জায়গা দখলমুক্ত করা হবে।’


পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ‘যাত্রীসেবার কথা চিন্তা করে টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু টার্মিনাল চালুর ব্যাপারে বাস মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। জেলা প্রশাসন টার্মিনালের জায়গা দখলমুক্ত করে দিলে এটিকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো।’