চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

পাঁচ বছর পর নকশায় পরিবর্তন, বেড়েছে ব্যয় ও সময়

চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্প ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’। বন্দরনগরীর সড়কে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার অংশজুড়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরমধ্যে আরও দুই দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নেওয়া হয় সময়সীমা। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ।

এদিকে প্রকল্প শুরুর পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। একই সঙ্গে তৃতীয় দফায় সময় বেড়েছে আরও দুই বছর। মেগা প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা অর্থাৎ ৩২ শতাংশ বেড়ে এখন ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সড়ক জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাত্রীদের নিত্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে যেখানে ২০-৩০ মিনিট সময় লাগার কথা, বর্তমানে সেখানে লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আবার কখনও কখনও যানজটের কারণে এর চেয়েও বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। যানজটের কবলে পড়ে সঠিক সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পেরে প্রবাসে যেতে না পারার উদাহরণও আছে অনেক।

 

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রকল্প অনুমোদন হলেও ২০১৯ সালে কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ের এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের আপত্তির কারণে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্প শুরুর আগেও সব সংস্থার মতামত নেওয়া হয়। তখন এসব সংস্থা কোনও আপত্তি তোলেনি। বর্তমানে সব জটিলতা নিরসন হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ চলছে। বাধা কাটিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্পের মোট পিলারের সংখ্যা ৩৭৯টি। এরমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৩০০টি পিলারের কাজ। ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার অংশের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ১৯৯ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা, অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ৩২ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।’

তিনি জানান, পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠানামার জন্য ২৪টি র‌্যাম্প থাকবে। এরমধ্যে টাইগারপাস এলাকায় চারটি, আগ্রাবাদে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেডে চারটি, কেইপিজেডে দুটি, কাঠগড়ে দুটি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে।  

এদিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ৯১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে একটি টিউব আগামী অক্টোবরে এবং অপর টিউব নভেম্বরে উদ্বোধনের কথা ভাবছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার আগে টানেল চালু হলে নগরীতে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। এ কারণে আমরা ভাবছি, ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে পতেঙ্গা থেকে নিমতলী পর্যন্ত আট কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে কিনা। একইভাবে নগরীতে যানবাহনের চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি নতুন সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজে বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের আপত্তির কারণে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এজন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। কাজ বেড়েছে। এ কারণে সময় ও ব্যয় বেড়েছে।’

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং উদ্বোধন করেন। নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের এ উড়াল সড়কটিতে যান চলাচলে নেওয়া হবে টোল। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর বিদ্যুৎ বিল এবং মেরামতসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। টোল আদায়ের টাকা থেকে এসব ব্যয় বহন করা হবে। তবে কোন ধরনের যানবাহন থেকে কত টাকা টোল আদায় করা হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। চালুর আগেই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’