প্রেমিকের সন্তানকে হত্যা করায় প্রেমিকার যাবজ্জীবন

কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিশু হত্যার দায়ে এক নারীর যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এক লাখ জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালত এ আদেশ দেন বলে জানান সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মোজাফ্ফর আহমদ হেলালী।

সাজাপ্রাপ্ত নারীর নাম জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী (২৭)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার খলিলুর রহমানের মেয়ে। নিহত শিশুর আল ওয়াসী (আড়াই বছর) একই এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে। মামলার বাদী রুনা ইসলাম নিহত শিশুর মা।

আদালতের পর্যবেক্ষণের বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নীর সঙ্গে নিহত শিশুর বাবা সাহাব উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মুন্নীর অন্যত্র বিয়ে হলেও সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর প্রেমিকের সঙ্গে আবারও সম্পর্কে জড়ান। পরে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েও ব্যর্থ হন। এতে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে এ হত্যাকাণ্ড  ঘটিয়েছেন।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে মামলার একমাত্র আসামি জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নীকে কক্সবাজার কারাগার থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে আনা হয়। দুপুরে বিচারক মামলার রায় পড়া শুরু করেন। পরে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেন। এ সময় তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলার রায় ঘোষণার সময় একমাত্র আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার নথির বরাতে মোজাফ্ফর আহমদ হেলালী জানান, গত ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি বিকালে চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় বাড়ির সামনে বাদী রুনা ইসলামের ছেলে আল ওয়াসী ও মেয়ে ইফতি প্রতিবেশী রফিক উদ্দিনের শিশু সন্তান মিনফা ও রাইসার সঙ্গে খেলাধুলা করছিলেন। একপর্যায়ে বাদী ছেলে-মেয়েকে নাস্তা খাওয়ানোর জন্য খুঁজতে যান। তখন ইফতিকে পেলেও আল ওয়াসীর সন্ধান পাননি।

তিনি আরও জানান, পরে স্বজনরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান না পেয়ে ঘটনার দিনই চকরিয়া থানায় মৌখিকভাবে জানান। পরদিন ২২ জানুয়ারি সকালে মাতামুহুরী নদীর দক্ষিণ পাড়ে পানিতে এক শিশুর লাশ পড়ে থাকার খবর স্থানীয়দের কাছে থেকে পেয়ে স্বজনরা শনাক্ত করেন। ওই দিন রাতে নিহত শিশুর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। রাতে পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মুন্নীকে গ্রেফতার করে। পরে আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিকে, একই বছরের ১ আগস্ট ঘটনার তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ ইসমাইল আদালতে চার্জশিট জমা দেন। পরে আদালত ওই বছরের ২২ অক্টোবর চার্জ গঠন করেন।