এবার আয়াতের বাবাকে ১২ টুকরো করার হুমকি

‘মেয়েকে ছয় টুকরো করা হয়েছে, বাড়াবাড়ি করলে বাবাসহ স্বজনদের ১২ টুকরো করে করা হবে’। এমন হুমকি দিয়ে চট্টগ্রামে নিহত আলিনা ইসলাম আয়াতের (৫) বাবার কাছে অজ্ঞাত নম্বর থেকে মেসেজ পাঠানোর অভিযোগ উঠছে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে আয়াতের বাবা সোহেল রানা এই দাবি করেন।

তিনি দাবি করেন, ‘একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি। তার ওপর অজ্ঞাত নম্বর থেকে আমার হোয়ার্টসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ হুমকিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি ভয়ে আছি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে।’

সোহেল রানা আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে এমন নৃশংসভাবে শুধু কি আবির আলীই হত্যা করেছে? এখানে চক্রও থাকতে পারে। তারা মিলেমিশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা তদন্ত করা প্রয়োজন। তা নাহলে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাওয়া থেকে সরে যেতে কারা হুমকি দিচ্ছে?’

এদিকে আয়াত হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। বিক্ষোভ মিছিল নগরীর জামলখান থেকে শুরু হয়ে চেরাগী পাহাড় মোড় পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষ হয়। প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আয়াতের বাবা সোহেল রানা মেয়ে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সকাল থেকে আয়াতের লাশের বাকি অংশ এবং পরনে থাকা কাপড় উদ্ধারে ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী সড়কের বঙ্গোপসাগর এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানার নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। তল্লাশি অভিযানে বিপুল সংখ্যক পিবিআই সদস্য অংশ নেয়।

লাশের খোঁজ করেছে পিবিআই

এ প্রসঙ্গে পিবিআই ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনোজ কুমার দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে পুনরায় আয়াতের লাশের অবশিষ্ট খণ্ডিত অংশ এবং পরনে থাকা কাপড়ের সন্ধানে তল্লাশি করা হয়। তবে আজ কিছুই পাওয়া যায়নি। আমরা আরও কয়েকদিন এ অভিযান পরিচালনা করবো।’

গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) নিহত আয়াতের লাশের মাথার খণ্ডিত একটি অংশ উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন বুধবার পায়ের দুই অংশ উদ্ধার করা হয়। এ পর্যন্ত লাশের তিনটি অংশ উদ্ধার করা হয়।

আয়াত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এর আগে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেছেন, ‘মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণ করে তাদের সাবেক ভাড়াটিয়া আবির আলী। গত ১৫ নভেম্বর নগরের ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা নয়াহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার মসজিদের পাশ থেকে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় আয়াতকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে লাশ আকমল আলী সড়কের নিজ বাসায় নিয়ে ছয় টুকরো করে আবির। লাশের টুকরো দুটি বস্তায় করে পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয় সে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন আয়াতকে না পেয়ে তার বাবা ইপিজেড থানায় নিখোঁজের জিডি করেন। জিডির ছায়া তদন্ত করে পিবিআই। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সে পিবিআইকে এসব তথ্য দিয়েছে।’

এদিকে, মঙ্গলবার ভোরে গ্রেফতার করা হয় ঘাতক আবির আলীর বাবা আজমল আলী, মা আলো বেগম ও বোন আঁখি আকতারকে। ওই দিন দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করার পর তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে আবির আলী সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছে।