কক্সবাজারে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

‘৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার জনসমুদ্রে পরিণত হবে’

কক্সবাজারে আগামী ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা। সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

৭ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটায় সৈকতের লাবনী পয়েন্টের কাছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

জনসভার প্রস্তুতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৬ মে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। ওই ভাষণে তিনি কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কক্সবাজারে বিভিন্ন উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। মেগা প্রকল্পগুলোর কয়েকটি এখন দৃশ্যমান। দ্রুত বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হবে।’

বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর চিত্র তুলে ধরে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্বপ্নের রেললাইন, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, মেডিক্যাল কলেজ, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফুটবল স্টেডিয়াম, বিকেএসপি, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ হাসিনা নৌ-ঘাঁটি, হাইটেক পার্ক, জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ প্রায় ৪০টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন কক্সবাজার ও দেশবাসী।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন উল্লেখ করে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র বলেন, ‘বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি আজ সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে রয়েছেন। সারা দেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন দেশবাসীর জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে দিয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এই এগিয়ে যাওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের পছন্দ নয়। তাই তারা দেশের এগিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়নের গতি ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশের শান্ত পরিস্থিতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করে লুটপাট, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে হাওয়া ভবনের মতো আরেকটি ভবন তৈরি করে পাকিস্তানি ভাবধারায় বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দুর্নীতিবাজ ও ফেরারি আসামি তারেক রহমান এবং সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার এই নীলনকশা কখনও সফল হবে না। দেশের মানুষ কখনও তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার অধিকার দেবে না।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মুখে হাসি দেখতে ভালোবাসেন। তিনি দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছেন। গৃহহীনকে ঘর ও ভূমিহীনকে ভূমির মালিক করেছেন। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, পুষ্টিভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতা ও পঙ্গুভাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষাভাতা দিয়ে সাধারণ মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন দেশের মানুষ। তার কথা শুনতে এবং একনজর দেখতে ৭ ডিসেম্বর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হবেন। সারা কক্সবাজার জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীকে তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উন্নয়ন উপহার দিয়েছেন উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারকে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে গড়তে চান শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে কক্সবাজার এসে ভ্রমণ করতে পারেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি। কক্সবাজার নিয়ে তার সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন রয়েছে। জাতির জনক কক্সবাজারকে খুব বেশি পছন্দ করতেন এবং কক্সবাজারবাসীকে ভালোবাসতেন। তাই এত উন্নয়নের পরও কক্সবাজারবাসী বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে আরও কিছু প্রত্যাশা করেন। এর মধ্যে তার কাছে আমাদের চাওয়া হলো—কক্সবাজারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজকে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তর, কক্সবাজারের সঙ্গে মহেশখালী উপজেলার সংযোগ সেতু ও বাঁকখালী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, কুতুবদিয়ার মগনামাঘাটে ফেরি চালু, কক্সবাজারে পর্যটন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চার লেনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক, ছয় লেনের কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কক্সবাজার সিটি করপোরেশন, কক্সবাজার সিটি কলেজকে সরকারিকরণ, যুগ যুগ ধরে ঝিনুক ব্যবসায় জড়িতদের পুনর্বাসন ও স্থায়ী আধুনিক ঝিনুক মার্কেট নির্মাণ।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ দলীয় নেতারা

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও বক্তব্য রাখেন—আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল আলম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানী-পাটোয়ারটেক সৈকতে অনুষ্ঠেয় চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ার উদ্বোধন করবেন তিনি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত নৌশক্তি মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও চীনসহ ২৮টি দেশ অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিন বেলা আড়াইটায় সৈকতের লাবনী পয়েন্টের কাছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার সড়কে অর্ধশতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে জনসভায় বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।