টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ, ৪০ ঘণ্টা পর বাবার দাফন

চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মারা যান মনির আহমদ (৬৫)। এরপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাফন আটকে থাকে। মরদেহ বাড়িতে আনার পর বাবার অবসরের টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এরপর পেরিয়ে যায় প্রায় ৪০ ঘণ্টা। অবশেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটেছে। মনির আহমদ ওই গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন তিনি। মনির আহমদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।

বড় উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মনির আহমদের মৃত্যুর পর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখে যাওয়া পেনশনের টাকা নিয়ে তার সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জের ধরে তার দাফন প্রক্রিয়া আটকে রাখেন সন্তানেরা। পরে সামাজিকভাবে বসে এর সুরাহা করা হয়েছে। সকাল ১০টায় বড় উঠান মোড়ে জানাজার পর মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব, বাবার লাশ দাফন আটকে দিয়েছে সন্তানরা

স্থানীয়রা জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ক্যান্সার আক্রান্ত মনির আহমদ। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, তার তিন বোন চিকিৎসা করানোর নামে বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা চাকরির অবসরের টাকা মেরে দিয়েছেন। ওই টাকার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ দাফন করতে দেবেন না। এ নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। পরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স এনে লাশ রাখা হয়।

মনির আহমেদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। অবসরে গেলে তিনি মোটা অংকের পেনশনের টাকা পান। অবসরের পর ক্যানসারে আক্রান্ত হন বাবা। মেজো বোন বেবি আকতার আমার বাবাকে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘ভাই-বোনদের মধ্যে ব্যাংকে রেখে যাওয়া বাবার পেনশনের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মরদেহ দাফন আটকে ছিল। বিষয়টি নিয়ে এলাকার ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সন্তানরা টাকার জন্য দাফন না করে আটকে রাখে। এটা অমানবিক। টাকার সমঝোতার পর নাকি মরদেহ দাফন করা হবে, তারা এমনটাই চেয়েছিল। পরে আমরা বিষয়টি সামাজিকভাবে সমঝোতা করেছি। আজ সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।’

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাবার রেখে যাওয়া পেনশনের টাকা নিয়ে বিরোধে ছেলে-মেয়েরা মরদেহ দাফন করতে দিচ্ছে না—এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম গিয়েছিল। মারা যাওয়া মনির আহমেদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। এর মধ্যে এক মেয়ে নাকি বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে নিয়েছে। অন্যরা টাকা পায়নি। এ কারণে দ্বন্দ্বে বাবার লাশ তারা দাফন করতে দেয়নি। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মারা যাওয়া ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে লাশ দাফনের সমঝোতা হয়। আজ সকাল ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’