চট্টগ্রামে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী

চট্টগ্রামে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নগরী এবং উপজেলার হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে দুই থেকে তিনগুন। নগরীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে হঠাৎ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। সরবরাহ করা হয়েছে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং স্যালাইন। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় মেঝেতেও অনেক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাটহাজারী থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি এ হাসপাতালে বিনামূল্যে ডায়রিয়ার ওষুধ কিংবা স্যালাইন কোনটাই পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মেসি থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ফ্যান না থাকায় প্রচণ্ড গরম। তার উপর বেড না পেয়ে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। এ কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগী বেশি থাকায় সব রোগীকে বেড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি ওষুধও সব রোগীকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মেডিক্যালের পাশাপাশি রোগী বেড়েছে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে। এখানে গত কদিন ধরে দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে কোনও কোনও রোগী খুব খারাপ অবস্থায় আসছেন বলেও জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ।

তিনি জানান, গত কদিন ধরে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে যেখান-সেখান থেকে জুস, পানি এবং খাবার খাওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত বাড়ছে। বর্তমানে তরমুজের মৌসুম। তরমুজ কাটার পর যাতে ফ্রিজে রাখা না হয়। ফ্রিজে কাটা তরমুজ থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমণ হয়। যা মানুষের শরীরে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাইরের খাবার যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার খারওয়া যাবে না। পানি অবশ্যই ফুটিয়ে খেতে হবে। যে কোনও কিছু খাওয়ার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। 
 ডায়রিয়া থেকে রক্ষার জন্য ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলায় ১৪ এপ্রিলের পর থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। আগে যেখানে অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল ১৫টি উপজেলার সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ৮৭ জন। ১৪ এপ্রিলের পর সেখানে দৈনিক অন্তত আরও একশর বেশি রোগী বেড়ে গেছে। বর্তমানে গড়ে দুইশর বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার সবকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্যালাইন মজুদ আছে।