মহাবিপদ সংকেত নামানোর আগেই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছে মানুষ

আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়েছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। টানা তিন ঘণ্টা পর বাতাস ও বৃষ্টি কমে আবহাওয়া শান্ত হতে শুরু করেছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এখনও বলবৎ আছে। এরমধ্যে রবিবার (১৪ মে) বিকাল থেকে কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষজন।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরা লোকজন বলছেন, ঘূর্ণিঝড় চলে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাড়ি ফেরার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য তারা বাড়ি ফিরছেন।

বাড়ি ফেরার পথে সদরের কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে আমার বাড়ি ভেঙে গেছে বলে শুনেছি। শনিবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলাম। এখানে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাই বাড়ি যাচ্ছি।’

একই এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার বাড়ি ফিরতে বলেছেন। এ জন্য বাড়ি যাচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কষ্টকর। এখানে থাকার চেয়ে নিজের বাড়িতে থাকা অনেক ভালো।’

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন লোকজন

শুধু নুরুল ইসলাম ও ইয়াসমিন নন, মহাবিপদ সংকেত বলবৎ থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাড়ি ফিরছেন। ইতোমধ্যে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ লোকজন বাড়ি চলে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘এখনও মহাবিপদ সংকেত রয়ে গেছে। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষজনকে বাড়ি ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও তারা কেন চলে যাচ্ছেন, তা আমাদের জানা নেই।’

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এবং স্বজনদের বাসাবাড়িতে দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন। মহাবিপদ সংকেত নামলে তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল।

তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় চলে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাড়ি ফেরার নির্দেশনা দিয়েছেন

এর আগে বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় মোখা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‌‘বিকাল ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। এতে ওসব এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে গেছে।’

মূলত সকাল ৯টা থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হয় উল্লেখ করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিকাল ৩টার দিকে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে গতিপথ বদলে মিয়ানমারের দিকে চলে গেছে ঘূর্ণিঝড়টি। এখন ভয়ের কিছু নেই। সন্ধ্যা ৬টার পর এটি পুরোপুরি দুর্বল হয়ে গেছে। আমাদের উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই।’

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলীয় কয়েকটি এলাকা। জেলার ১০ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এরমধ্যে দুই শতাধিক আংশিক, বাকিগুলো পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের ১২০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হলেও এখন পর্যন্ত নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন উপকূলের এসব বাসিন্দা

সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘জেলার ১০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১২০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঝড়ো হাওয়ায় সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে গেছে। তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এটি আমাদের প্রাথমিক হিসাব। পরে আরও ক্ষয়ক্ষতির খবর পেলে সেটি এই হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।’

সন্ধ্যার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে গেছে উল্লেখ করে জেলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘এটি দুর্বল হয়ে গেছে। তবে আগামী দুদিন সাগর উত্তাল এবং বৃষ্টির অব্যাহত থাকতে পারে। এ জন্য মহাবিপদ সংকেত বলবৎ আছে। পরে এটি নামানো হবে।’