চট্টগ্রামে বাড়ছে শরিক পদ্ধতিতে কোরবানি

চট্টগ্রামের হাটে পশুতে ভরপুর থাকলেও দাম বেশি। এখনও ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রামের হাটগুলোতে বিক্রির জন্য আনা হচ্ছে গরু, মহিষ ও ছাগল। গত বছর যে গরু ৬০ হাজার টাকায় পাওয়া গেছে এবার সেটি লাখ টাকার বেশি চাওয়া হচ্ছে। এ কারণে বিপাকে পড়েছেন কোরবানিদাতারা। এতে বাড়ছে শরিকে কোরবানিদাতার সংখ্যাও। এদিকে হাটে পশু বিক্রেতারা বলছেন, এবার গরুর খাদ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি পশু পরিবহনে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে এর প্রভাব পড়েছে পশুর দামে।

নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর বিবিরহাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এবার এ হাটে গত বছরের তুলনায় পশু কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুরাদপুর এলাকায় একটি কালভার্ট সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মূল সড়ক বন্ধ রয়েছে। যে কারণে বিক্রেতারা সহজে পশু আনতে না পেরে অন্যান্য হাটে নিয়ে যাচ্ছে।

এ হাটে পশু বিক্রেতা উজ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ১৪টি গরু যশোরের মাগুরা থেকে বিক্রির জন্য এনেছেন। ট্রাক ভাড়া ৫৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এ হাটের খুঁটিতে ১৪টি গরু বাঁধার জন্য দিতে হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ১৪টি গরুর জন্য চারজন সহযোগী রয়েছেন। যারা দিন-রাত দেখা-শোনা করছেন। তাদের বেতনসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি গরুর পেছনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। এ কারণে এসব ব্যয় যোগ হচ্ছে পশুর দামে। 

চন্দনাইশ উপজেলার বড়পাড়া এলাকায় অবস্থিত সাঙ্গু এগ্রো ফার্মের কর্মকর্তা জুয়েল দেওয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে এই এগ্রো ফার্ম পরিচালিত হচ্ছে। এবার এ ফার্মে কোরবানিতে বিক্রিযোগ্য ৫৫টি গরু-মহিষ রয়েছে। তবে পশুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, খাদ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে হয়েছে দ্বিগুণ। ওষুধের দাম বেড়েয়ে কয়েকগুণ। সে হিসেবে শ্রমিকের বেতন বেড়েছে। যার কারণে পশুর দামও বেড়েছে।

নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত নুর নগর হাউজিং এস্টেট পশুর হাটের ইজারাদার সাইফুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২০ জুন থেকে অন্যান্য হাটের মতো এ হাটেও পশু বেচাকেনা শুরু হয়। তবে আজ পর্যন্ত আশানুরূপ পশু বিক্রি করা হয়নি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ভালো বেচাকেনা হবে। প্রতিটি পশুর হাজারে ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এবার পশুর দাম বেশি হওয়ায় বেচাকেনা কম হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’

নগরীর হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল আলম মুবিন বলেন, ‘কোরবানি পশুর দামে অতীতের সব রেকর্ড এবার ভঙ্গ করেছে। এবারের মতো পশুর দাম অতীতে কখনও দেখা যায়নি। স্বাভাবিক সময়ে গরুর মাংসের প্রতি মণ ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি মণ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার বেশি চাওয়া হচ্ছে। গরুর দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়েছে। কোরবানিকে ঘিরে গরুর এতো বেশি দাম বাড়ার কারণ দেখছি না। এরপরও বাড়ছে কেন তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

নগরীর মুরাদপুর নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শওকত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার চট্টগ্রামে গরুর দাম অনেক বেশি। গত বছর ৬০-৭০ হাজার টাকায় দুই মণ ওজনের গরু পাওয়া গেছে। এবার একই গরু এক লাখ টাকার বেশিতে দাম চাওয়া হচ্ছে। এ কারণে বিপাকে পড়েছে কোরবানিদাতারা। অনেকের একার পক্ষে এ দামে গরু কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে শরিকে কোরবানিদাতা বাড়বে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা এবং নগরীতে মিলে ২২২টি স্থায়ী এবং অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী পশুর হাট ৬০টি এবং অস্থায়ী পশুরহাট ১৬২টি। এর মধ্যে নগরীতে নয়টি হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। নগরীতে তিনটি স্থায়ী এবং ছয়টি অস্থায়ী হাট রয়েছে। বাকিগুলো জেলার ১৫টি উপজেলায়।  

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর  বলেন, ‘চট্টগ্রামে এবার ঈদুল আজহায় ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি পশু কোরবানি দেওয়া হবে। নগরী এবং ১৫ উপজেলার মধ্যে এসব পশু কোরবানি করা হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা এবং নগরীর ৮ হাজার ২২০টি খামারে কোরবানি যোগ্য পশু আছে আট লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। সে হিসেবে ঘাটতি থাকবে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি পশু। ঘাটতি পশু মৌসুমী ব্যবসায়ী তথা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রির জন্য আনা পশুতে পূরণ হবে।’