মায়ের ২০ হাজার টাকা চুরি, শোধ করার জন্য বন্ধুকে অপহরণের পর হত্যা

চট্টগ্রামে কিশোর নুরনবী (১৪) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। অপহরণের পর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল অপহরণকারীদের টার্গেট।

জানা গেছে, কৌশলে ঢাকা থেকে প্রথমে ওই কিশোরকে নেওয়া হয় ফেনীতে, এরপর চট্টগ্রামে। এরই মধ্যে অপহরণকারীরা বিকাশে স্বজনদের কাছে টাকাও দাবি করে বসে। তবে কিশোরের পরিবার বিষয়টি পুলিশকে জানানোয় ধরা পড়ার ভয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাতের পর ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। গ্রেফতারের পর পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে গ্রেফতার মো. হোসাইন (১৬)।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) চট্টগ্রামের হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে পুলিশ নুরনবীর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

এরপর পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় জামালপুর থেকে শনিবার রাতে কিশোর হোসাইনকে গ্রেফতার করে। তাকে সোমবার (২৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে তোলা হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামালপুর থেকে মো. হোসাইন নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে তার বন্ধু নুরনবীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। কী কারণে হত্যা করেছে তার বিস্তারিত আদালতে বর্ণনা দিয়েছে। প্রতিবেশী কামরুল ইসলামসহ মিলেমিশে নুরনবীকে চট্টগ্রামে আনার পর হত্যার বিষয়টিও জানানো হয়।’

পুলিশ জানায়, হোসাইন জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার মেসের চর এলাকার মৃত সাইফুর রহমানের ছেলে। পরিবারের সঙ্গে থাকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ধলপুর চাঁন মিয়া বেপারীর বাসায়। একই স্থানে থাকে নুরনবীর পরিবার। তারা বন্ধু ছিল। এমনকি নুরনবী হোসাইনকে মামা বলে ডাকতো।

গ্রেফতারের পর পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে জানিয়েছে, ‘মায়ের ট্রাঙ্ক থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে খরচ করে ফেলে। বিষয়টি তার মা জানার পর ওই টাকা যোগাড় করে দিতে বকাঝকা করতে থাকে। হোসাইনদের বাসায় ভাত খেতো কামরুল। কামরুল তার  (হোসাইন) মাকে মা বলে ডাকতো। গত ১৭ বা ১৮ আগস্ট কামরুল তার বাসায় হোসাইনকে ডেকে নিয়ে বলে তোর মা বার বার টাকার কথা বলছে। চল আমরা নুরনবীকে নিয়ে গিয়ে তার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তোকে ২০/৪০ হাজার টাকা দেবো।’

হোসাইন আরও বলে, ‘কামরুল ভাই আমাকে শিখিয়ে দেয় যে, আমরা ফেনীতে কামরুল ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যাবো। সেখানে দুই তিন দিন থেকে আবার ফিরে আসবো। পরে তিনি আমাকে ৫০০ টাকা বিকাশ করে দেন। গত ২১ আগস্ট বিকালে আমি এবং নুরনবী যাত্রাবাড়ী থেকে বাস করে ফেনীতে যাই। সেখানে কামরুল ভাই আমাদেরকে রিসিভ করেন। আমাদেরকে হোটেলে থাকার জন্য নিয়ে গেলে হোটেলের লোক আমরা ছোট বলে থাকতে দেয়নি। পরে কামরুল ভাই আমাদেরকে তার ছোট ভাইয়ের গ্যারেজে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।’

‘আমরা ফেনীতে দুই দিন ছিলাম। তারপর আমাদের গত ২৩ আগস্ট চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। ২৪ আগস্ট কামরুল ভাই নুরনবীর বাবার নম্বরে কল করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন তার পরিবার পাঁচ হাজার টাকা বিকাশ করে। কামরুল যখন জানতে পারেন, বিকাশ দোকানে পুলিশ কল করেছে তখন টাকা না তুলে চলে যায়। আমিও সঙ্গে চলে যাই।’

‘কামরুল ভাই নুরনবীকে মারার জন্য একটি কালো ছুরি কিনে আনেন। ২৪ আগস্ট রাত অনুমান ১২টা ১০ মিনিটে কামরুল নুরনবীর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করলে চিৎকার করতে থাকে। তখন আরও ২/৩ বার ইট দিয়ে আঘাত করেন। তখন ইটটি ভেঙে যায়। আমি মনে করি, যদি নুর নবী ইটের আঘাতে মারা না যায় তাহলে সে পাগল হয়ে ঘুরবে তার এই কষ্টটা আমার সহ্য হবে না। তাই নুরনবীর পেটে ছুরি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি।’