চট্টগ্রাম নগরী থেকে জলাবদ্ধতা দূর করতে ২০১৪ সালে একটি খাল খনন প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরীর বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন এই খাল খনন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি খাল খননের কাজ। এতে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ৯ বছরে বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর দুই হাজার ২৬৪ হেক্টর এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হবে।
বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় চট্টগ্রাম নগরী। সড়ক অলি-গলি এবং বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগের শিকার হয় নগরবাসী। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এই খাল খননসহ নগরীতে ১০ হাজার ৯২১ কোটি ২২ লাখ টাকার মোট চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
এরমধ্যে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ টাকায় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এছাড়া এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করে আবারও অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ সময় এক লাফে ব্যয় বেড়ে হয় এক হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। গত বছর ১৯ এপ্রিল সবশেষ সংশোধিত ব্যয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এরমধ্যে এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে প্রায় ২৫ দশমিক ২৩৫ একর জমি অধিগ্রহণে। চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক চসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম বলেন, ‘খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান। সাম্প্রতিক রেকর্ড বৃষ্টিতে কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু জটিলতাও রয়েছে। বর্তমানে ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে দিন-রাত চেষ্টা চলছে।’
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মঈন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই বহদ্দারহাটসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সমস্যা বছরের পর বছর ধরে চলছে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান। এসব প্রকল্পের মেয়াদ আর টাকা বাড়ে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলে না, বরং সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলিউর রহমান বলেন, ‘১৯৬৮ সালে
সিডিএ গৃহীত বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ম্যাপে নগরীতে খাল আছে ৭১টি। ওই ম্যাপে এসব খালের দৈর্ঘ, প্রস্থও রয়েছে। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী, এসব খাল উদ্ধার করলে চট্টগ্রামে নতুন করে খাল খননের প্রয়োজন হতো না। দখল-দূষণের কারণে চট্টগ্রামের অনেকগুলো খাল অস্তিত্বহীন। সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার করছে। বাকিগুলোর কী হবে? এসব খাল খনন-সংস্কার না হলে নগরীর জলাবদ্ধতা কখনও নিরসন হবে না।’
এ প্রসঙ্গে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বাড়ইপাড়া খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতার কষ্ট থেকে ১০ লাখ নগরবাসীর মুক্তি মিলবে। বিশেষ করে শুলকবহর, মোহরা, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া ও চাক্তাইসহ ৮ ওয়ার্ডের বাসিন্দা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।’
ছবি: প্রতিবেদক