চুরি ঠেকাতে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে হবে ভিডিও

খাদ্যশস্য পরিবহনের সময় একের পর এক ঘটছে চুরির ঘটনা। বিশেষ করে এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে নেওয়ার সময় পথিমধ্যে চুরি হচ্ছে খাদ্যশস্য। খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে খাদ্যশস্য পাঠানোর আগে এবং পৌঁছানোর পরের ভিডিও ধারণ করে, তা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম কায়ছার আলী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা ও পরিবহন শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখলেও বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম কায়ছার আলী।

অফিস আদেশের চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারি খাদ্যগুদামের খাদ্যশস্য পরিবহনকারী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদার (ডিআরটিসি) ও অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদারদের (আইআরটিসি) জানানো যাচ্ছে, যেকোনো গুদাম থেকে চাল-গম ও খাদ্যশস্য গাড়িতে বোঝাইয়ের পর ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর অর্থাৎ নির্দিষ্ট গুদাম কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর ১০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলো। এর সঙ্গে অবশ্যই খাদ্যশস্য বোঝাইকৃত ট্রাকের ভি-ইনভয়েসের কপি, ট্রাক নম্বর এবং গুদাম নম্বরের ভিডিও পাঠাতে হবে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ভিডিও না পাঠালে কিংবা পাঠাতে ব্যর্থ হলে ধরে নেওয়া হবে, বোঝাইকৃত খাদ্যশস্য নির্দিষ্ট গুদামে পৌঁছায়নি। এর ফলে সংশ্লিষ্ট খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক এবং পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের কোনও ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হবে। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা-২০১৮-এর বিধি-২ (খ) অনুযায়ী প্রশাসনিকভাবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এই চিঠি চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের দুটি সাইলো, বিভাগের ১১ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, পরিবহন দফতর, তিনটি সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো, ১০০ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও ১১৫টি লোকাল স্টোরেজ ডিপোর কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে খাদ্যশস্য পরিবহনের সময় চাল-গম চুরির ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটছে। খাদ্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব খাদ্যশস্য চুরি হচ্ছে। যে কারণে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে খাদ্যশস্য পাঠানোর সময় কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত ১৬ মে হালিশহর গুদাম থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে তিনটি ট্রাক খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে একটি ট্রাক পথ পরিবর্তন করে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেটি পটিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। অপর দুটি ট্রাক গন্তব্যে না গিয়ে চলে যায় লোহাগাড়ায়। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। ৯ মে দেওয়ানহাট গুদাম থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে বের হওয়া একটি ট্রাক গায়েব হয়ে গিয়েছিল। পরে সেটিকে বন্দর থানার দাম্মাম ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। এর আগে খাতুনগঞ্জ গুদাম থেকে চাল নিয়ে গন্তব্যে না গিয়ে কালোবাজারে বিক্রির সময় আটক করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম কায়ছার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খাদ্যশস্য পরিবহনের ভিডিও পাঠানোর বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করছি আমরা। এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিভাগের সব খাদ্য অফিস এই নিয়ম মেনে চলবে। কেউ নিয়ম না মানলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’