বাঁশখালীতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা: দুই দশকেও শেষ হয়নি বিচার

দুই দশক পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার এখনও শেষ হয়নি। ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর উপজেলার সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে গান পাউডার ছড়িয়ে আগুনে পুড়িয়ে নারী-শিশুসহ ১১ জনকে হত্যা করা হয়। ওই সময় ঘর থেকে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান বিমল কান্তি শীল।

তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নিহতের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বিমল কান্তি শীল ঘটনার পর বাঁশখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন। এ মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আদালতে সাক্ষীরা নির্ধারিত তারিখে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।

এ মামলার বাদী বিমল কান্তি শীল বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার পর আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ মামলায় চার-পাঁচ মাস পর একবার তারিখ পড়ছে। মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনীহার কারণে বারবার পেছাচ্ছে শুনানি। এ মামলায় ৩৭ জন আসামির মধ্যে ১৮ জন পলাতক এবং ১৮ জন রয়েছেন জামিনে। প্রধান আসামি স্থানীয় বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান কারাগারে আছেন। চলতি বছরের ১২ জুন ও ৯ নভেম্বর এ মামলার সর্বশেষ শুনানিকালে কোনও সাক্ষী আদালতে হাজির হয়নি। এ কারণে মামলাটি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে।’

বিমল জানান, এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সাতকানিয়া সার্কেলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ক্লারেন্স গোমেজ তদন্ত শেষে ২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা আমিনুরকে বাদ দিয়ে ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদী আদালতে আপত্তি জানিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেন। ২০০৭ সালের ২০ মার্চ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পাঠায়।

এরপর কয়েকবার তদন্ত কর্মকর্তা বিএনপি নেতা ও কালিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানকে বাদ দিয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে মামলার বাদী প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে নারাজি দেন। এরপর সর্বশেষ এ মামলার অষ্টম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এ অভিযোগপত্রে আমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়। এতে সাক্ষী করা হয় ৫৭ জনকে। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনীহার কারণে মামলাটি দ্রুত শেষ করা যাচ্ছে না। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আশা করছি মামলাটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবো।’