‘চাঁদা না পেয়ে’ জালে আগুন, জেলেদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই মৎস্য কর্মকর্তাসহ আহত ৭

ফেনী নদীতে নিষিদ্ধ বিহনতি জাল জব্দ করে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জেলেদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা মৎস্য ও  উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের শাহাপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জেলেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে জালের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। বিষয়টি সমাধানে সন্ধ্যায় জেলে নেতা ও মৎস্য কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে।

আহতরা হচ্ছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা, জেলে কৃষ্ণ জলদাস, প্রাণ জলদাস, সুজন জলদাস, শ্রীধাম জলদাস ও নয়ন জলদাস। আহতরা সকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হাসান ইমাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বাদী হয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।’

এ সময় বিক্ষুব্ধ জেলেরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার ব্যবহৃত গাড়ি ঢাকা মেট্টো-ঘ (১৫১৬৩১) ভাঙচুর করেছেন। বিকাল চারটার দিকে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে জালের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলে, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ২টার দিকে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বড় ফেনী নদীর চরখোন্দকার মোহনায় অভিযান চালিয়ে নৌকায় থাকা ৩০-৪০টি বিহনতি জাল জব্দ করা হয়। দুটি জাল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকটি জাল কেটে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

খবরটি চরখোন্দকার জলদাস পাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে জেলেরা দলবদ্ধ হয়ে শাহাপুর বাজারে গিয়ে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়ির গতিরোধ করে হামলা চালায়। এ সময় দুই মৎস্য কর্মকর্তা ও তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে জেলেদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুপক্ষের ৭ জন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শাস্ত করে দুই মৎস্য কর্মকর্তাসহ তাদের সঙ্গীদের উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় বিকালে দুই শতাধিক জেলে ইউএনও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।

ইউএনও কামরুল হাসান ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জেলেদের শান্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় থানায় ইউএনও, ওসি, জেলে নেতা ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা বৈঠকে বসেন।

জেলেদের সর্দার প্রিয়লাল জলদাস ও জগদ্বিশ জলদাস বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মচারী রাজুর মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা জেলেদের নিকট গত কয়েক দিন যাবৎ মাথাপিছু এক হাজার টাকা করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে হঠাৎ করে বিনা নোটিশে নিরীহ জেলেদের জালগুলো জব্দ করেন। পরে আগুনে পুড়িয়ে ও কেটে নদীতে ফেলে দেন।’

তারা আরও জানান, এ‌তে জেলেরা ঋণের কিস্তি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে জেলেদের। জালের ক্ষতিপূরণ না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তারা।

জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন ও তুর্য সাহা বলেন, ‘বিহনতি জাল জব্দ করায় বিক্ষুব্ধ জেলেরা তাদের ওপর হামলা করে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানে জেলে নেতা ও মৎস্য কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে।’