সাংবাদিকদের ওপর হামলা: আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবি

মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে সাংবাদিক নেতারা।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতার সভাপতিত্বে এই বিক্ষোভ সমাবেশে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

টিভি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হকের সঞ্চালনায় এই বিক্ষোভ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন নিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের ভেতরেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে এই সাংসদ। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই হামলায় জড়িত মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল করতে হবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘বাঁশখালীর মতো একটি সমৃদ্ধ জনপদে এই ধরনের হীন মানসিকতার কেউ রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে পারে না। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকে ভাবতে হবে। অন্যথায় এই সাংসদের অপকর্মের ভার দলকে বারবার বহন করতে হবে।’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ। তিনি বলেন, ‘হামলা চালিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান এখনও নানাভাবে হামলার শিকারদের হেনস্তা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই হীন চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আমাকে নিয়েও নানা অমূলক-আপত্তিকর কথা প্রচার করছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দীন মোহাম্মদ রেজা। তিনি এই ঘটনায় সাংসদ মোস্তাফিজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘মাঠে-ঘাটে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা এভাবে মার খাবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এমপি মোস্তাফিজ বর্তমান ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। নিজে দোষ করে এখন সাংবাদিকদের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করছেন। যা চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা কিছুতেই হতে দেবে না।’

সাংবাদিকদের ওপর আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের হামলা

মোস্তাফিজুর রহমান ভোটের ভেতর এইরকম ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতি তৈরি করে পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম বলেন, ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। আওয়ামী লীগে নেতার অভাব নেই। এই রকম নেতা একজন না থাকলেও অসুবিধা নেই।’ তিনি মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমানের এই ধরনের অপকর্ম এবারই প্রথম নয়। এর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মারধর করেছেন, নির্বাচনি কর্মকতাদের মারধর করেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। বারবার ছাড় পেয়ে এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।’

সভায় টিভি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব কাজী মহসিন বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান তার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। তিনি আইনপ্রণেতা হয়ে এই ধরনের আচরণ করতে পারেন না।’

বিএফইউজের সহসভাপতি শহীদুল আলম বলেন, ‘অতি দ্রুত এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার করা না হলে সাংবাদিকরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে।’ তার মনোনয়ন বাতিলের আহ্বান জানান তিনি।

পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আচরণবিধি ভঙ্গ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে তাদের মারধর, ক্যামেরা-ট্রাইপড ভাঙচুর করেন মোস্তাফিজ ও তার অনুসারীরা। এ সময় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক রাকিব উদ্দীন, ভিডিওগ্রাফার তারাচরণ দাশগুপ্ত, আরটিভির ভিডিওগ্রাফার এমরাউল কায়েস মিঠু, চ্যানেল আইয়ের বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদ, ক্যামেরাম্যান মো. সোলায়মানসহ বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আহত হন।