তিন মামলায় নুরজাহান গ্রুপের এমডিকে শ্যোন অ্যারেস্ট

দেশের শীর্ষস্থানীয় ঋণখেলাপি নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জহির আহমেদ রতনকে আরও তিনটি মামলায় গ্রেফতার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) শুনানি শেষে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ঋণখেলাপির অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের দায়ের করা ৬টি অর্থঋণ জারি মামলায় রতনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়। অপরদিকে তার আইনজীবীরা তার জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। জহির উদ্দিন আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৬১টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল।

এর আগে ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জহির আহমেদ রতনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। রতন কোতোয়ালী থানাধীন রামজয় মহাজন লেনের ওসমান মঞ্জিলের হাজি আবদুল খালেকের ছেলে।

কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম ওবায়েদুল হক জানিয়েছেন, নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতনের বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী ও খুলশী থানায় মোট ২৬টি সিআর সাজা ও ৩৫টি সিআর গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ সর্বমোট ৬১টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

জহির আহমেদ রতন নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাসমিন প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স খালেক অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মারবীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেড এবং তাসমিন প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আদালত সূত্র জানায়, রতন গত ২০১১ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে আত্মগোপনে চলে যান রতন। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে আদালত মামলার শুনানি শেষে আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত আসামিকে দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেন। সাজা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নুরজাহান গ্রুপের এমডি জহির আহমেদ রতনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আছে। বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ৬১টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। মঙ্গলবার তাকে নতুন করে তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় জহির আহমেদ রতন এবং তার অপর তিন ভাই দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। রতনের স্ত্রী এবং সন্তানেরা ২০১২ সাল থেকে কানাডায় বসবাস করছে। অর্থঋণ আদালত থেকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রতন দেশত্যাগ করতে পারেননি। তাকে গ্রেফতারের জন্য গত বছরের ১৫ জানুয়ারি পুলিশের আইজি বরাবরে আদেশের কপি পাঠায় চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।’