বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতার নিয়ে বিতর্কের মুখে রংপুর মহানগরের হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহকে বদলি করা হয়েছে। শনিবার রাতে তাকে বদলি করা হয়। একইসঙ্গে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজিরহাট থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী।
এর আগে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। গ্রেফতারের বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়ে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আব্দুল আল মামুন শাহ রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাকে রংপুর মহানগর পুলিশের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজীরহাট থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে এ বছরের ৩ জুন রংপুর নগরের হাজীরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের স্ত্রী মাসুবা হাসানের অভিযোগ, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, ‘যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি (ছমেছ উদ্দিন) হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে হাজিরহাট থানার ওসি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে ইচ্ছামতো আসামি করেছেন। আমার স্বামীকে মূলত পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এর পেছনে আছেন দু-একজন চিকিৎসক, অন্যজন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আমি তাদের নাম এখন বলবো না। এর আগেও ওই দুজন আমার স্বামীকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।’
এদিকে, রবিবার দুপুরে মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ (হাজিরহাট আমলি আদালত)-এর বিচারক সোয়েবুর রহমানের আদালতে তার জামিনের আবেদন করেন মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা।
তার আইনজীবী শামীম আল মামুন আদালতকে বলেন, মাহমুদুল হক নির্দোষ। যে হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। মাহমুদুল হক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আবু সাঈদ হত্যার পর তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।
আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপনের পর আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির আদেশ দেন আদালত। পরে আদালত চত্বরে আইনজীবী শামীম আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, মাহমুদুল হকের জামিন শুনানির আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তাদের বক্তব্য শুনেছেন। ২৪ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, শিক্ষক মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত ও সসম্মানে মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।