হজের নিবন্ধন করতে গিয়ে জানলেন মৃত, বাড়ি ফিরলেন কষ্ট নিয়ে

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় অনলাইনে হজের নিবন্ধন করতে গিয়ে নিজেকে ‘মৃত’ জানলেন মো. তছলিম (৭৫)। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে হজের নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন কপি তুলতে গেলে তাকে ‘মৃত’ বলে জানানো হয়। পরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে একই তথ্য দেওয়া হয়। ফলে এবার হজে যেতে পারবেন না বলে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলেন এই বৃদ্ধ।

মো. তছলিম রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়নের উদমারা গ্রামের মুনছুর আহম্মদের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘মৃত’র তালিকা থেকে ওই ব্যক্তির নাম সরানোর আশ্বাস দিয়েছেন রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফয়সাল আলম।

মো. তছলিম জানিয়েছেন, হজের নিবন্ধন করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি কার্ড) অনলাইন কপির প্রয়োজন পড়েছে। সেটি তুলতে স্থানীয় বাজারের একাধিক কম্পিউটার দোকানে গেলে ‘মৃত’ বলে জানানো হয়। পরে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পরিচয়পত্রের অনুলিপি তুলতে যাই। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পরিচয়পত্রের অনুলিপি প্রিন্ট করে দেখেন, সেখানে লেখা ১৯৫৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. তছলিমের জন্ম, পরিচয়পত্র নম্বর ৩২৯০৫৭০৯০৬, স্ট্যাটাস (অবস্থা) মৃত। 

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অফিস থেকে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। কারণ এবার আর হজে যেতে পারবো না। হজের নিবন্ধন শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আগামী বছর পর্যন্ত বাঁচবো কিনা, তা আল্লাহ জানেন।’ 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফয়সাল আলম বলেন, ‘মো. তছলিম বুধবার সকালে তার ছেলেকে নিয়ে আমার কার্যালয়ে আসেন। আমি সার্ভারে সার্চ দিয়ে দেখলাম, ডেড ভোটার। বর্তমানে হজসহ বিভিন্ন কাজ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অনলাইন যাচাইয়ের অনুলিপি প্রয়োজন হয়। কিন্তু মৃত ভোটার হওয়ায় পরিচয়পত্রের অনুলিপি কাজে লাগবে না। এ অবস্থায় আবেদন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধন করে দেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। আমরা সংশোধন করতে পারবো না।’ 

একটি চক্র এই কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে এই নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিচয়পত্রের অনুলিপি প্রিন্ট করে আবেদনপত্র দিয়ে মো. তছলিমকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আগারগাঁওয়ে পাঠানো হয়েছে। এই ধরনের সমস্যা নিয়ে গেলে, তা দ্রুত ঠিক করে দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এখন হজের সময় স্বল্পতার কারণে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধন করে দেওয়া নাও হতে পারে। ফলে ওই ব্যক্তি হজে যেতে পারবেন না।’

জানতে চাইলে চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাওলাদার নূরে আলম জিকু বলেন, ‘বর্তমানে নানা কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অনলাইন যাচাইয়ের অনুলিপি প্রয়োজন হয়। অনলাইনে যাচাই করতে গিয়ে মো. তছলিমের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি পাওয়া যায়নি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এলে তখনই সংশোধনের আবেদন করলে এতদিনে হয়ে যেতো। বুধবার আমার কাছে আসার পর জীবিত আছেন মর্মে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। প্রত্যয়নপত্র ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিলে এটি সংশোধন হয়ে যাবে। তবে সময় লাগবে। কতদিন লাগবে তা বলা যাচ্ছে না।’

জীবিত হতে আবেদন

এদিকে, সৌদি আরবের দেওয়া কোটার প্রায় অর্ধেক খালি রেখেই হজ নিবন্ধনের সময় শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি)। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি হজযাত্রীর সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানিয়ে বাকি কোটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। নিবন্ধনের সময় আর বাড়ছে না জানিয়ে আজকের মধ্যেই আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে বলেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি হজ নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও অনেক হাজি ও এজেন্সির অনুরোধে বিশেষ আট দিন দেওয়া হয়। এরপর যারা নিবন্ধন করতে পারবেন না তারা এ বছর আর হজে যেতে পারবেন না। যদি কোটা ফাঁকা থাকে, তা সৌদি সরকারকে ফেরত পাঠানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৬৯ হাজার ৬৩৪ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৮১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৫ হাজার ৫৫৩ জন নিবন্ধন করেছেন। সে হিসাবে এখনও কোটা খালি রয়েছে ৫৭ হাজার ৫৬৪টি।

হজের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় প্রথমে সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।