রায়পুরে নারীদের জন্য নির্মিত ৩ মার্কেটই এখন পুরুষদের দখলে

অব্যবস্থাপনার কারণে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত তিন মার্কেটের এখন বেহাল দশা। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দেখভাল করার কথা থাকলেও কার তত্ত্বাবধানে এগুলো চলছে- কেউ জানে না। এ সুযোগে নারীদের মার্কেটগুলো এখন পুরুষের দখলে চলে গেছে।

নারীদের তৈরি কুটিরশিল্পের পণ্যসামগ্রী তাদের দিয়েই বিপণন, প্রদর্শন ও স্ব-উদ্যোগী করার লক্ষ্যে সরকার এসব মার্কেট নির্মাণ করে। অথচ অব্যবস্থাপনার সেগুলোর এখন দুরবস্থা। আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জ বাজার, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ও বাবুরহাট বাজারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) পূর্বাঞ্চলীয় পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালে মার্কেটগুলো নির্মিত হয়। প্রাপ্ত ভাড়ার পাঁচ শতাংশ ভূমি রাজস্ব খাতে, ১৫ শতাংশ মার্কেটের রক্ষণাবেক্ষণে ও ৮০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহবিলে জমা হওয়ার কথা।

হায়দরগঞ্জে নির্মিত মার্কেটে শাহিদা বেগম, ফরিদা বেগম, তাছলিমা বেগম, পারভিন বেগম ও দেলোয়ারা বেগমের নামে পাঁচটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কখনও নিজেরা ব্যবসা করেননি। দোকানপ্রতি বছরে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন রাশেদ ব্যাপারী, ইকবাল হোসেন, রাকিব পাটওয়ারী ও মুরাদ হোসেনের কাছে। তারা সেখানে শাকসবজি, হোটেল ও ক্রোকারিজের ব্যবসা করছেন।

market2

মার্কেটটি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি চুক্তি হয়। সেখানে উল্লেখ ছিল, প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৪ দশমিক ৫৮ টাকা। বরাদ্দপ্রাপ্তরা কখনও দোকানের মালিকানা দাবি ও হস্তান্তর বা সাবলিজ দিতে পারবেন না। নারী নিজে অথবা পরিবারের কোনও নারী সদস্য বা নারী কর্মচারী দিয়ে দোকান পরিচালনা করবেন। কোনও অবস্থাতেই আত্মীয় বা অনাত্মীয় পুরুষ লোককে দোকানের বিক্রেতা বা পরিচালনায় নিযুক্ত করতে পারবেন না। পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তিপত্রটি আর নবায়নও করা হয়নি। বরাদ্দপ্রাপ্তরা কেউ দোকানের নির্ধারিত ভাড়া ইউনিয়ন পরিষদকেও পরিশোধ করেননি।

দোকান বরাদ্দ পাওয়া তাছলিমা বেগম বলেন, ‘আমরা মহিলা হওয়ায় বাজারে বসে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের নামে দেওয়া দোকানগুলো পুরুষদের কাছে ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। একবার চুক্তিপত্রও দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নে কয়েকবার ভাড়ার টাকা দিয়েছি। এখন আর ভাড়া দেই না।’

markett3

এদিকে উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ও বাবুরহাট বাজারের মার্কেট নির্মাণের প্রায় ১৫ বছর হতে চললেও এগুলো এখনও কারও নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। খাসেরহাট মার্কেটটিতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন শহিদুল ইসলাম নামের একজন। তিনি স্থানীয় রুহুল আমিন খলিফা, মফিজুর রহমান খান, নাজিবুল্লাহ ছৈয়াল ও আবুল কালামের কাছ থেকে ঘরগুলো ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন বলে দাবি করেন। সরকারি বরাদ্দ নেওয়ার কাগজ বা কোনও ভাড়া চুক্তিনামা তিনি দেখাতে পারেননি।

উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন হাওলাদার ও উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদার বলেন, ‘মার্কেট ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং পরিষদ ভাড়া নেবে- এটা আমাদের জানা ছিল না। এগুলো কেউ জবরদখল করে থাকতে পারবেন না। দ্রুত এগুলোর একটি ব্যবস্থা করা হবে।’

উপজেলা হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এলজিইডির রায়পুর প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সুমন মুন্সি বলেন, ‘নির্মাণের পর এগুলো হস্তান্তর করে দেওয়ায় এখন কোনও দায়িত্বে নেই আমাদের। হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন।’