সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বিপ্লব

স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, বাবাকে দেখতে চায় দুই শিশুসন্তান

‘ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে কথা হয়েছে। এরপর থেকে যোগাযোগ হয়নি। তার জন্য অস্থির হয়ে আছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে যেন নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়।’

এমন আকুতি জানিয়েছেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ইলেকট্রিশিয়ান মো. ইব্রাহীম খলিল বিপ্লবের বাবা আবুল হোসাইন। বিপ্লব ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর গ্রামের বাসিন্দা। 

বুধবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে জিম্মি হওয়ার খবর শুনে মঙ্গলবার রাত থেকে কাঁদছেন বাবা-মা। দুই ছেলেসন্তানকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন বিপ্লবের স্ত্রী উম্মে সালমা সোনিয়া। তাকে কাঁদতে দেখে কাঁদছিল তাদের ছয় ও তিন বছরের দুই ছেলে। তাদের কান্না থামাতে মোবাইল থেকে বিপ্লবের ছবি দেখান স্ত্রী। তবু কান্না থামছিল না।

ছেলের জন্য অস্থির অপেক্ষার কথা জানিয়ে আবুল হোসাইন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। ওই সময় বলেছিল, সবার মোবাইল কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে দস্যুরা। তাদের জাহাজের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। জাহাজটি দস্যুরা সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। এরপর আর কথা হয়নি। ছেলেকে সুস্থভাবে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আমার ছেলের মতো সব জিম্মিকে যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, সরকারের কাছে আমার এটাই অনুরোধ। একইসঙ্গে জাহাজ মালিকপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।’

ইব্রাহীম খলিল বিপ্লব

উম্মে সালমা সোনিয়া বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১০টায় তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল আমার। তখন ভয় ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছিল। এরপর থেকে উৎকণ্ঠায় আছি আমরা। দুই ছেলের কান্না থামাতে পারছি না। কিছুক্ষণ পরপরই বাবাকে দেখতে চায় তারা। ছেলেদের জন্য হলেও স্বামীকে সুস্থ ফিরে পেতে চাই।’ 

সোনিয়ার খালাতো ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেরিন সোসাইটি, বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করছি। সবাই একান্তভাবে চেষ্টা করলে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

বিপ্লবের শ্বশুর ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কোম্পানির মালিক যৌথ উদ্যোগে যেন মেয়ের জামাইকে ফিরিয়ে আনে, এটিই আমার দাবি।’

এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে বিপ্লবসহ ২৩ বাংলাদেশি আছেন। জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন স্বজনরা।