জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ

দুই দিন ধরে মেয়েদের সঙ্গে কথা হচ্ছে না শামসুদ্দিনের, উৎকণ্ঠায় পরিবার

জলদস্যুদের কবলে পড়া কবির গ্রুপের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র বহরে ছিল মোহাম্মদ শামসুদ্দিন (৪০)। আনোয়ারা উপজেলার মধ্যবন্দর সেন্টার এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে শামসুদ্দিন জাহাজটিতে ওয়েলার পদে কর্মরত ছিলেন। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছেন তিনিও। বিপদে পড়ার খবর পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার।

এদিকে, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন বুধবার (১৩ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাহাজটি গত পাঁচ ঘণ্টায় গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালের মধ্যে সোমালিয়া পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়া থেকে ১৭০ মাইল দূরে অবস্থান করছে।’

শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন মেয়ে সন্তানের জনক শামসুদ্দিন পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সকলের ছোট শামসুদ্দিন। স্বজনদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে। তখন তিনি মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমাদের জিম্মি করে ফেলেছে। প্রত্যেক জলদস্যুর হাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র আছে। আমরা ভয়ে আছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

মোহাম্মদ শামসুদ্দিন (ফাইল ছবি)

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই বছর আগে কবির গ্রুপের জাহাজে চাকরি নেন শামসুদ্দিন। তার বড় মেয়ে রামিছা আক্তার (১২), মেজ মেয়ে সাঈদা আক্তার (৬) ও ছোট মেয়ে আড়াই বছর বয়সী সরাইয়া আক্তার।’

শামসুদ্দিনের স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়েছিল। আমাকে বলেছিল, আমরা জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছি। কী হবে জানি না, সবাইকে দোয়া করতে বলো। আমি এখনও ভালো আছি।’

রিমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি তিনি। ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে আমাদের সংসার। প্রতিদিন মেয়েদের সঙ্গে ফোন করে তাদের খোঁজখবর নিতো। আমরা তার (শামসুদ্দিন) জন্য খুবই চিন্তিত। জাহাজ মালিক এবং সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব তাকেসহ জিম্মি সবার যাতে মুক্তি করার ব্যবস্থা করেন।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে কবির গ্রুপের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের সকলেই জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।

এর আগে, ২০১০ সালে একই মালিকের জাহাজ ‘এমভি জাহাজ মণি’ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মালিকপক্ষের উদ্যোগে দীর্ঘ তিন মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়।