জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ

স্বামীকে হারিয়ে এবার ছেলের শোকে কাতর হোমায়রা বেগম

স্বামীকে হারানোর এক মাসের মাথায় এলো আরেকটি দুঃসংবাদ। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ছেলে। প্রথম দিকে খবরটা না শুনলেও, খুব বেশি দেরি হয়নি। যখনই শুনেছেন তখন থেকেই ছেলের জন্য আর্তনাদ করছেন মা হোমায়রা বেগম। জিম্মি জাহাজের ২৩ জনের মধ্যে আছেন লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানও।

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সোনাপুর ইউপির রাখালিয়া গ্রামের বিনন ব্যাপারী বাড়িতে গিয়ে আইয়ুবের মাকে ছেলের জন্য আর্তনাদ করতে দেখা যায়।

ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন ব্যাপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে। তিনি রাখালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রামগঞ্জের ফরিদ আহমেদ ভুঁইয়া একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন তিনি। প্রায় বছরখানেক ধরে ইন্টার্ন করছেন আইয়ুব।

মা হোমায়রা বেগম জানান, সোমবার (১১ মার্চ) বিকালে আইয়ুবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষবার কথা বলেছেন। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) তার অন্য ছেলেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কেউ তাকে কিছু জানায়নি। পরে রাতে নাতির কাছ থেকে শুনে মেজ ছেলেকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চান। ছেলে তাকে জানিয়েছে, আইয়ুবের জন্য চিন্তা না করতে। ভারত মহাসাগরে আইয়ুবদের জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুরা অস্ত্র ঠেকিয়ে কবজা করেছে।

এসব শোনার পর থেকেই আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই তিনি। আইয়ুবের কোনও খবরও পাওয়া যাচ্ছে না, তার ছেলে কেমন আছে; এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা মা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হোমায়রা বেগম বলেন, ‘আমি আমার বাবারে চাই। আমি আর কী চাইতাম। আমি দুদিন ধরে জানপ্রাণ দিয়ে কোরআন শরিফ পড়ছি। আল্লাহ আপনি রহমত নাজিল করে দেন। আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২০-২৫ দিন আগে সবশেষ আইয়ুব বাড়িতে এসেছিল। একদিন থেকেই চলে গেছে।’

অবসরে সহকর্মীদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে উঠতেন আইয়ুব

আইয়ুবের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘আইয়ুব খুব ভালো ছেলে। আমরা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে চাই। সে যেন দ্রুত আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে এই কামনাই করছি।’

আইয়ুবের প্রতিবেশী তারেক হোসেন বলেন, ‘চাচা (আইয়ুব) ভালো মনের অধিকারী। আমাদের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশতেন ও খেলাধুলা করতেন। আমরা তাকে দ্রুত ফেরত চাই।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এ সময় শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ার দস্যুরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটিকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোর ৬টা পর্যন্ত জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। দুপুর নাগাদ জাহাজটি সোমালিয়ায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকসহ জাহাজটির অবস্থান বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় শনাক্ত করা গেছে। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া থেকে ৭২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। আজ দুপুরের মধ্যে জাহাজটি সোমালিয়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। হয়তো এরপর জলদস্যুরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনও দাবি জানায়নি।’

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।