জিম্মি জাহাজে নাবিকদের সঙ্গে খাচ্ছে ৩০ দস্যু, রান্না বসাতে হচ্ছে ৩ বেলা

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র জিম্মি নাবিকদের খাবারে ভাগ বসিয়েছে জলদস্যুরা। জিম্মি হওয়ার দিন নাবিকদের কাছে ২০-২৫ দিনের খাবার মজুত ছিল। পানি ছিল ২০০ টনের মতো। প্রতি বেলায় এখন ৩০ জনের মতো জলদস্যু নাবিকদের সঙ্গে খাবার খাচ্ছেন। তাদের জন্য প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বেলা রান্না বসাতে হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে খাবার-পানি। জাহাজের চিফ কুক আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে এ রান্নার কাজ করছেন। জিম্মি জাহাজে থাকা নাবিকদের পাঠানো অডিও বার্তায় এসব তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান পরিবারের সদস্যদের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠান। সেখানে বলেন, ‘জলদস্যুরাসহ আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে। আমাদের পানি ব্যবহার করছে। আমাদের এ খাবার ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। ১০-১৫ দিন পর আমাদের খাবার যখন শেষ হয়ে যাবে তখন খুব কষ্টে পড়ে যাব। এটাই হলো আমাদের পরিস্থিতি।’

গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) জাহাজটির দেশে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার এবং ২০০ টনের মতো খাবার পানি মজুত আছে। সবাইকে বলেছি, এগুলো সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়বো আমরা।’

এদিকে, শুক্রবার জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র অবস্থান পরিবর্তন করেছে। আগে নোঙর করা স্থান থেকে প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জলদস্যুরা তাদের এলাকায় নিয়ে নোঙর করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আতিক উল্লাহ খানের ছোট ভাই মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খান আসিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) বড় ভাই বিকাল ৫টার দিকে ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, জাহাজসহ তাদেরকে নতুন একটি জায়গায় নিয়ে গেছে। তারা ভালো আছেন জানিয়েছেন। মুক্তিপণের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনও কথায় বলছেন না দস্যুরা। তবে চিন্তিত আছেন খাবার-পানি নিয়ে। তাদের কাছে যেসব খাবার-পানি মজুত আছে তা থেকে দস্যুরাও খাচ্ছেন। এ কারণে দ্রুত খাবার-পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তিনি চিন্তিত।’

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটি ১২ মার্চ জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই দিন সন্ধ্যায় শামসুদ্দিন ফোন করেছিল। এরপর থেকে তিনি আমাদের কাছে ফোন করেননি। কেমন আছেন আমরা তাও বলতে পারছি না। তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বেশ উদ্বিগ্ন। তার পরিবারে স্ত্রীসহ তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। তারা বাবার জন্য কান্নাকাটি করছে। তবে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে চলেছি। তারা বলেছে, জাহাজটির সব নাবিকই সুস্থ আছেন।’

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটি দস্যুরা শুক্রবার তাদের আরও সেফ জোনে নিয়ে গেছে। এখনও মালিক পক্ষের কাছে কোনও দাবি জানায়নি। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজে থাকা সব নাবিক সুস্থ আছেন।’

মঙ্গলবার আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে কবির গ্রুপের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।

এর আগে ২০১০ সালে একই মালিকের জাহাজ এমভি জাহাজ মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মালিক পক্ষের উদ্যোগে দীর্ঘ তিন মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়।