ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি

কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন আদর্শ সদর উপজেলার শাসনগাছায় জামিল হাসান অর্ণব নামের এক যুবক দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ২৫ জন অস্ত্রধারীকে শনাক্তের পর নজরদারিতে রেখেছে। কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন ভারত সীমান্তেও কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। যেন কোনও আসামি পালিয়ে যেতে না পারে। পুলিশের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

শনিবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনও মামলা হয়নি। এদিকে শনিবার জোহর নামাজের পর শাসনগাছা ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় জানাজা শেষে অর্ণবকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লার শাসনগাছা বাস টার্মিনালের লেগুনার স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে স্থানীয় দফাদার বাড়ি ও মোল্লা বাড়ির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এ নিয়ে টার্মিনালের পাশে দুই পক্ষ শুক্রবার (১৫ মার্চ) সংঘর্ষে জড়ায়। এতে মধ্যমপাড়া দপাদার বাড়ির মো. আজহার মিয়ার বড় ছেলে জামিল হাসান অর্ণব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অর্ণব ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হন আরও তিন জন।

এই সংঘর্ষের তিন মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের লোকজন অন্য পক্ষের ওপর গুলি, ককটেল ও ইট ছুড়ছে। তাদের তিন-চার জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০-১২ জনের হাতে রামদা দেখা যায়। কয়েকজন মুখে মাস্ক পরা ছিলেন। অন্য পক্ষকে ভিডিওতে দেখা যায়নি, তবে গুলির শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া ককটেল ও ইট ছুড়ে মারতেও দেখা যায়।

এদিকে তার মৃত্যুর পর ছাত্রলীগের এক পক্ষ তাকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দাবি করে। কিন্তু তার কোনও নথি তারা দেখা পারেনি। অপরদিকে কুমিল্লা জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অর্ণব দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তাকে ছাত্রলীগ বানানোর চেষ্টা করেছে একটি পক্ষ। কিন্তু অর্ণব আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করতো। গত রমজানেও তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে। তার কোনও দোষও ছিল না। সে এগুলোর বিষয়ে যুক্তও ছিল না। সে সামনে ছাত্রদলের বড় দায়িত্বে আসছিল। আমরা তাকে সিলেক্ট করেছিলাম। এ কারণেই তার কাছাকাছি এসে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ গোলাগুলি করে আমাদের ভাইটাকে মেরে ফেললো।’

জামিলের বাবা মো. আজহার মিয়ার বলেন, ‘অর্ণব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে পড়তো। শাসনগাছা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সড়কে লার্নিং হোম নামের একটি কোচিং সেন্টার চালাতো। এ ছাড়া শাসনগাছা বাস টার্মিনালে সততা পরিবহনের বাস কাউন্টারে কাজ করতো। বাস টার্মিনালের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ চলছিল। তবে আমার ছেলে এতে জড়িত ছিল না। অর্ণব জুমার নামাজ পড়ে ঘরে ফিরছিল। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে সে গুলিতে নিহত হয়। তার সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ ছিল না। তার বুকে গুলি লাগে।’

জামিল হাসানের মা ঝর্ণা আক্তার জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে অর্ণব সবার বড়। ছেলেটা সংসারের জন্য পরিশ্রম করতো। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।

কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘শাসনগাছা এলাকার মোল্লা বাড়ি ও মধ্যমপাড়া এলাকার লোকজন বাস টার্মিনালের লেগুনা স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে একজন মারা যান। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।’

আরও পড়ুন:

দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রদল নেতা নিহত