ঝুলে আছে ঝুলন্ত সেতুর সংস্কারকাজ

ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ঝুলন্ত সেতুর সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে গত পাঁচ বছর ধরে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছিল এই সেতু। কিন্তু সংস্কারের নামে বন্ধ রাখায় সেই সৌন্দর্য হারিয়েছে। দ্রুত এটি সংস্কার করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। তাহলে আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নান্দনিকতা বাড়াতে চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের পাশে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ঝুলন্ত সেতুটি। প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ দায়িত্বে থাকাকালীন রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে ২০০৯ সালে নির্মাণ করেন বিশেষ এই সেতু। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার আগে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কাঁটাতারে বাঁধা হয় সেতুটি। সেই হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে সেতুটি কাঁটাতারে বাঁধা হয়। এরপর সংস্কারের অজুহাতে আর খোলা হয়নি সেতুটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে ঝুলন্ত সেতু ছিল অন্যতম আকর্ষণ। এই সেতু নির্মাণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল, তেমনি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের প্রশাসনিক ভবনে যাতায়াত করাটা সহজ হয়েছিল। একসময় এই সেতুতে থাকতো নবীন শিক্ষার্থী আর দর্শনার্থীদের ভিড় এবং হিড়িক পড়তো ছবি তেলার। কিন্তু বর্তমানে সেতুটি ধ্বংসপ্রায়।

গত সোমবার ঝুলন্ত সেতু ঘুরে দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে একসময়ের নান্দনিক সেতুটি। দুই পাশের প্রবেশপথে কয়েকটা বাঁশ আর কাঁটাতার দিয়ে বেড়া দেওয়া সেতুটির চারপাশে লতাপাতা ঘিরে ধরেছে। দেখে মনে হবে, কোনও জঙ্গল। সেতুর কিছু কিছু জায়গায় মরিচা ধরে ও শ্যাওলা জমে বিবর্ণ হয়ে আছে। আবার বেশ কিছু জায়গায় পাটাতন ভেঙ্গে গেছে। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু আছে।

তবে সেতুর নির্মাণ সময়কালের বাজেট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোনও ধরনের নথিপত্র দেখাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চবি প্রকৌশল দফতরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্মকর্তারা একে-অপরকে দায়ী করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা তাদের রেকর্ড খাতা খুঁজে দেখে। কিন্তু রেকর্ড খাতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই পর্যন্ত সবধরনের তথ্য থাকলেও সেতু সম্পর্কিত কোনও তথ্য দেখাতে পারেনি তারা।

চবি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চলন্ত চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার করণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ঝুলন্ত সেতুটি। প্রশাসন যদি একটু নজর দেয় তাহলে আমরা আমাদের আগের সেই ঝুলন্ত সেতুটিকে ফিরে পাবো।

চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমার যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসি, তখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত বইগুলোতে ঝুলন্ত ব্রিজের ছবি দেখে ভালো লেগেছিল। একদিন খুঁজতে গিয়ে দেখি ছবিতে দেখা এত সুন্দর ঝুলন্ত ব্রিজটা পড়ে আছে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায়। তখন খুবই খারাপ লাগে। পরে শুনি সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এই চারবছরে আজ পর্যন্ত কখনোই দেখলাম না সংস্কারের কাজ করতে।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা সংস্কারের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু নানা সমস্যা থাকার কারণে এটা নিয়ে কাজ করার সময় হয়ে ওঠে নাই। তবে আমাদের পরিকল্পনায় আছে। ঝুলন্ত সেতুর বিষয়ে আমরা সামনের সভায় আলাপ করবো এবং নতুন একটা বাজেট তৈরি করে কাজ শুরু করবো।