মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৪ কৃষক, পুলিশ বলছে ‘উদ্ধার করেছি’

কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের শিকার পাঁচ কৃষকের মধ্যে চার জন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন। শনিবার (২৩ মার্চ) রাত ১২টার দিকে উপজেলার হ্নীলার নুরালী পাড়া ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ি এলাকায় তারা ছাড়া পান। এখনও একজন অপহরণকারীদের কাছে জিম্মি রয়েছেন।

তবে পুলিশ বলছে, ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃত চার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি একজনকেও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

ফেরত আসা কৃষকরা হলেন- হ্নীলা পানখালী এলাকার ফকির মোহাম্মদের ছেলে মো. রফিক (২২), শাহাজানের ছেলে জিহান (১৩), ছৈয়দ উল্লাহর ছেলে শামীম (১৫) ও নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান (১৫)। তবে আব্দুর রহিমের ছেলে মো. নুর (১৮) এখনও জিম্মি রয়েছেন। সন্ত্রাসীরা তার পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোরে হ্নীলার পানখালী এলাকায় পাহাড়ি এলাকা থেকে পাঁচ কৃষককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এরপর থেকে তাদের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে আসছিল সন্ত্রাসীরা।

মুক্তিপণের বিষয়টি স্বীকার করে ফেরত আসা অপহৃত জিহানের বাবা শাহাজান বলেন, অপহরণকারীদের কথা মতে পাহাড়ের একটি জায়গায় মুক্তিপণের এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর তারা আমার ছেলেসহ চার জনকে ছেড়ে দিয়েছে। বাকি একজনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করছে।

তবে মুক্তিপণের বিষয়টি জানা নেই দাবি করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, হ্নীলায় একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে অভিযান চালিয়ে অপহৃত চার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ধাওয়া খেয়ে অস্ত্রধারীরা বাকি একজনকে নিয়ে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। ৩০-৩৫ অস্ত্রধারী অপহরণকারী ছিল। 
আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অপহৃত পরিবার মুক্তিপণের জন্য কাউকে টাকা দিয়েছে কি না সেটি তারাই জানে।

মুক্তিপণে ফেরত আসা শামিমের বড় ভাই মো. ইব্রাহীম বলেন, টাকা দেওয়ার পর আমার ভাইকে ফেরত দিছে অপহরণকারীরা। ভাইয়ের শরীরে মারধরের ব্যাপক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তাদের সবাইকে পুলিশ এখন হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে এসেছে। তবে দুঃখের বিষয় মুক্তিপণ দিতে না পারায় অপহৃত মো. নুরকে ফেরত দেয়নি অস্ত্রধারী অপহরণকারীরা।

অন্যদিকে গত ১০ মার্চ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে সাত জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। একদিন পর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফিরে আসেন। এর আগে গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে (৬) অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও তাকে উদ্ধার করা যায়নি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক ১০৩টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫২ জন স্থানীয় এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। যারা ফিরে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়েছেন।